জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে বাড়িতে আটকে রেখে মারধর ও নিয়োগসংক্রান্ত কাগজে জোর করে সই নেওয়া সেই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদসহ চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) শুনানি শেষে খুলনার কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আজাহারুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদ, মাওলানা মাসুদুর রহমান, মাওলানা মজিবুর রহমান ও রাসেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, গত ৫ মে কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগবিধি অনুযায়ী ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম। লিখিত পরীক্ষায় কোনো প্রার্থী উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানকে নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ-আল মাহমুদ। চাপ উপেক্ষা করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে অনড় থাকেন অধ্যাপক। এতে ক্ষিপ্ত হন সভাপতি। পরে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল আহসানের গাড়িতে করে ফেরার পথে মাদরাসার সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ-আল মাহমুদের বাড়ির সামনে পৌঁছালে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের গতিরোধ করেন।

পরবর্তীতে গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান তার মুঠোফোন, মানিব্যাগ, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ আনুমানিক ২০ হাজার টাকা ও তার হাতে থাকা ঘড়ি ছিনিয়ে নেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন কিল ঘুষি মারতে মারতে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। এতে রাজি না হলে একটি ঘরে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের পর জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এ সময় তাদের মারধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে পান নজরুল ইসলাম।

এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। মামলার পর উচ্চ আদালত থেকে দুই সপ্তাহের আগাম জামিন নেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদ। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের প্রার্থনা করলে আদালতের বিচারক তা নামঞ্জুর করেন। আজ কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

মোহাম্মদ মিলন/এবিএস