চলতি আম মৌসুমের উদ্বোধনী দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১৩ হাজার ৬৬৫ কেজি আম নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেল ৪টায় ট্রেনটি রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসলেও ৬টা ২৫ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন ছেড়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি স্টেশনে বুকিং হওয়া ১৩ হাজার ৬৬৫ কেজি আমের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ হাজার ১৫০ টাকা। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. ওবাইদুল্লাহ ও রহনপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের চার স্টেশনে বুকিং হওয়া ১৩ হাজার ৬৬৫ কেজি আমের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে বুকিং হয়েছে ৭ হাজার ৮৮৭ কেজি। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১০ হাজার ৫১৩ টাকা। রহনপুর রেলস্টেশনে ২১৫ ক্যারেটে ৪ হাজার ৭৫৮ কেজি আম বুকিংয়ের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ হাজার ২৯৫ টাকা। আমনুরা রেলস্টেশনে ৪৫ ক্যারেটে ৯০০ কেজি বুকিংয়ে রাজস্ব আদায় ১ হাজার ১৮০ টাকা এবং নাচোল রেলস্টেশনে ৬ ক্যারেটে ১২০ কেজি আম বুকিং হয়েছে।৷ সেখানে রাজস্ব আদায় ১৬২ টাকা। 

এর আগে দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকাগামী ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু হওয়ায় খুশি আম ব্যবসায়ীরা। তবে আরও কয়েক দিন আগে চালু হলে এর সুফল ভালোভাবে পাওয়া যেত বলে দাবি আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের। 

বিকেল ৬টা ২৫ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন ছাড়ার পর বিভিন্ন স্টেশন থেকে আম নিয়ে রাত ১টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। এর আগে রহনপুর থেকে বিকেল ৪টায় ছাড়ার পর নাচোল স্টেশনে পৌঁছায় বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, নিজামপুরে রেলস্টেশনে ৪টা ৪০ মিনিটে, আমনুরা জংশনে পৌঁছায় বিকেল ৫টায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন ছাড়ার পর আমনুরা বাইপাস ও কাঁকানহাট থেকে  আম নেওয়ার কথা রয়েছে। এসব স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে ব্যবসায়ী ও চাষিদের খরচ হবে প্রতি কেজিতে ১ টাকা ৩২ পয়সা।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৭টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ৭টা ৫৩ মিনিটে সারদহ রোড, রাত ৮টা ১৫ মিনিটে আড়ানি, ট্রেনটি আব্দুলপুরে পৌঁছাবে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে। এসব স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে ব্যবসায়ীদের গুনতে হবে ১ টাকা ১৭ পয়সা।

ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। মাঝে জয়দেবপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে আম বুকিং করার জন্য দাঁড়াবে। ট্রেনটি তেজগাঁও পৌঁছাবে রাত ১টা ১৫ মিনিটে। 

আম ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর এই ট্রেনে আম পাঠাই। এই মাধ্যমে খরচ কম ও আম পচে যাওয়া, নষ্ট হওয়া, হারিয়ে যাওয়ার মতো তেমন ঝুঁকিও নেই। এমনকি রাতের মধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম পৌঁছে যায়। 

আমচাষি মেহেদী হাসান জানান, কুরিয়ার সার্ভিসে আম পরিবহনে খরচ হয় কেজি প্রতি ১২-১৮ টাকা করে। অন্যদিকে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে একই পরিমাণ আমে খরচ মাত্র ১ টাকা ৩২ পয়সা। সরকার গত তিন বছর ধরে লোকসান করেও আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে আম পরিবহনের জন্য ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি চালু রাখায় আমরা খুশি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, গত বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আম বুকিংকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে আম বুকিং করা হচ্ছে। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে শুধু আম নয়, আমের সঙ্গে শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফলমূলও পরিবহন করা যাবে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে রাজধানীগামী ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি প্রথম চালু হয় ২০২০ সালের ৫ জুন। ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত চলা ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২ কেজি। এতে রাজস্ব আয় হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৪৫৮ টাকা। দ্বিতীয়বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে ট্রেনটি চালু করা হয়। সেই বছর আম পরিবহন করা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৩ কেজি। রাজস্ব আদায় হয় ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২০ টাকা। সর্বশেষ গত বছর এই ট্রেনে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৫ কেজি আম পরিবহন করা হয়। এতে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৪ টাকা আয় হয়েছিল।

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর