মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেরচর এলাকায় সম্প্রসারিত ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। নির্মাণকাজ শেষ হলেও বরাদ্দ হয়নি অর্ধেক শিল্প প্লট। বরাদ্দকৃত প্লটও খালি পড়ে আছে। খালি পড়ে থাকায় যেখানে থাকবার কথা শিল্প প্লট সেখানে গজিয়েছে ঘাস আর ঝোপ জঙ্গল। 
  
ব্যবসায়ীদের দাবি, শিল্প প্লটের দাম বেশি। নেই গ্যাস সংযোগ। এসব কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মাদারীপুর বিসিকের শীর্ষ কর্মকর্তার দাবি, আগামী দুই এক বছরের মধ্যেই গড়ে উঠবে কলকারখানা। 

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ১৯৮৭ সালে মাদারীপুরে একটি শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ২০১৪ সালে মাদারীপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নের লক্ষ্যে মাদারীপুর বিসিক শিল্পনগরীর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে মোতাবেক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। শুধু ভুমি অধিগ্রহণ খাতেই ব্যয় হয় ৩০ কোটি ২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। শুরু করা হয় শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ। ১৮টি শিল্প ইউনিটে ৪৬টি প্লট করা হয়। নির্মাণকাজ শেষ করে ২১ এপ্রিল ২০২২ সালে মাদারীপুর সম্প্রসারিত বিসিক উদ্বোধন করা হয়। কাগজে কলমে উদ্বোধন করা হলেও সেখানে গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্প কলকারখানা। ৪৬টি প্লটের মধ্যে বরাদ্দ হয়েছে ২২টি প্লট। বাকি ২৪টি প্লট এখনও বরাদ্দ হয়নি। বরাদ্দকৃত ২২টি প্লটও ফাঁকা পড়ে আছে। গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্প কলকারখানা। শিল্প উদ্যোক্তদের দাবি ভূমি উন্নয়ন, রাস্তা, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন, গ্যাস সংযোগ প্রভৃতি সুযোগ সুবিধা না থাকলে কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এছাড়াও প্লটের দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণেও বরাদ্দ হয়নি অনেক প্লট।

শিউলি আক্তার নামে এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, বিসিকের প্লটের অনেক দাম। তারপর ওই স্থানে সকল কিছুই তেমন ভালো নেই।  নতুন অবস্থায় সেখানে কোন কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে সেখানে ভালো চলবে না  কারণ সেখানে পানি সরবরাহ বিদ্যুৎ এগুলো তেমন একটা ভালো নেই। নতুন অবস্থায় সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে গেলে লোসকান পোহাতে হবে আমাদের। 

 হাওয়াই মিঠাই উদ্যোক্তা মজিবুর রহমান বলেন, আমি আগে মুন্সিগঞ্জে হাওয়াই মিঠাই কারখানা মেশিন করেছিলাম বিসিক থেকে প্লট নিয়ে। আমার বাড়ি মাদারীপুরে আমার ইচ্ছা ছিল যে মাদারীপুরে বিসিক থেকে একটি প্লট ভাড়া নিয়ে মিঠাই ব্যবসা আবারও শুরু করব কিন্তু বিসিকে যে অবস্থা এখানে মনে হয় যে ব্যবসা করে তেমন কোনো সুফল আসবে কিনা জানি না। 

আরেক নতুন উদ্যোক্তা রায়হান বলেন, যেহেতু আমাদের পদ্মা সেতু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি এ অঞ্চলে যেন একটু গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে সেখানে আমরা স্বল্পতেই সফলতা দেখতে পারব। 

মাদারীপুর পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও উদ্যোক্তা অলিউল আহসান কাজল বলেন, নতুন বিসিকের শিল্পপ্লটের দাম বেশি। নেই গ্যাস, বিদ্যুৎ সুবিধা। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছে থাকলেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে আগ্রহ নেই। 
 
মাদারীপুর বিসিক শিল্পনগরীর ভারপ্রাপ্ত এজিএম পার্থ সারথী দাস বলেন, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে সহায়তাসহ জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে এই বিসিক অর্থনৈতিক। তবে উৎপাদনে যেতে আর দুই এক বছর সময় লাগবে । 

রাকিব হাসান/আরকে