স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সৌদি আরবে থাকতেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের হুমায়ুন কবীর। ছিলেন সফল ব্যবসায়ী। কিন্তু তার দোকানের এক কর্মচারীকে বিশ্বাস করে কানাডা যাওয়ার ফাঁদে পড়ে সৌদির ব্যবসা ও দেশের জমিজমা বিক্রি তাকে দেন প্রায় দুই কোটি টাকা। এরপর থেকে লাপাত্তা সজিব নামে ওই কর্মচারী। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার প্রায় তিন বছর পর প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

গত বুধবার (২ আগস্ট) রাতে ঢাকার মধ্য বাড্ডার গোদারাঘাট এলাকা থেকে প্রতারক মো. সজিব রহমান ও তার সহযোগী সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজিব নওগাঁর রানীনগর থানার দেওলা (সহলিয়া) গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে। 

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে পিবিআই সজিবকে আদালতে হাজির করলে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। 

পিবিআই জানায়, জেলার ত্রিশাল পৌরসভার ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে হুমায়ুন কবির। তিনি ২০০১ সাল থেকে সৌদি আরবে থাকতেন। প্রথমে শ্রমিক হিসেবে গেলেও ২০০২ সালে সৌদি আরবে নিজস্ব ফুড ও লন্ড্রি ব্যবসা শুরু করে সচ্ছলতার সঙ্গে দিন যাপন করে আসছিলেন হুমায়ুন। স্ত্রী ও দুই সন্তানও থাকেন সৌদিতে। ২০২০ সালের শেষের দিকে তার দোকানে কাজ নেন সজিব রহমান। অন্তত পাঁচ মাস কাজ করার পর সজিব প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কানাডায় যাওয়ার কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে হুমায়ুনকে বলে তিনি শিগগিরই কানাডা যাচ্ছেন। হুমায়ুন যদি তাকে টাকা দেন তাহলে তিনি তাকেও সপরিবারে কানাডায় নিয়ে যেতে পারবেন। সজিবের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে হুমায়ুন তাকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক, বিকাশ কখনো নগদ অর্থ দিতে থাকেন। সজিব কানাডায় যাওয়ার অংশ হিসেবে দেশে চলে এসে হুমায়ুনকেও দেশে আনে। দেশের জমিজমা বিক্রি করায়। প্রবাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি ও দেশের জমিজমা বিক্রি করে ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দেন সজিবকে। 

এরপর থেকে সজিব তার ফোন নম্বর বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে  হুমায়ুন ত্রিশাল থানায় ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর মামলা করেন। প্রথমে থানা পুলিশ পরে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে আসামি ধরতে না পারলে আদালত মামলার তদন্তভার পিবিআই ময়মনসিংহকে দেয়। 
 
চলতি বছরের ১৮ মার্চ মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে পিবিআই প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কয়েক মাসের মধ্যে আত্মগোপনে থাকা আসামি সজিবের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে।

প্রতারণার শিকার হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্বাস করে ভুল করেছি। আমি আজ নিঃস্ব। এখন আমি অন্যের মাছের খামারে শ্রমিকের কাজ করি। এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই এনং আমার টাকা ফেরত চাই। 

পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার বলেন, এটি ছিল প্রতারণার চাঞ্চল্যকর ঘটনা।  সজিব ছিল অত্যন্ত ধূর্ত। ঘটনার পরেই সে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। এমনকি সে তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও যোগাযোগ করত না। ধূর্ত সজিব লোকচক্ষুর অন্তরালে নতুনভাবে জীবনযাপন করতে থাকে। 

তিনি আরও বলেন, সহযোগী আসামি সোহেল রানা ও প্রতারক সজিব রহমানকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সজিব রহমান নিজেকে জড়িয়ে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। 

উবায়দুল হক/আরএআর