হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকায় অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন

করোনা শুরুর পাঁচ মাসের বেশি সময় লকডাউন থাকায় চরম লোকসানে পড়েছিল কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই তৃতীয় ধাপে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১ এপ্রিল থেকে টানা ১৪ দিনের জন্য পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। বর্তমানে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ফাঁকা হয়ে পড়ছে। এতে বেকার হয়ে পড়বেন অন্তত অর্ধ-লক্ষাধিক শ্রমিক।

জেলা প্রশাসন বলছেন, করোনার তৃতীয় ধাপে এসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। এটি আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। একই সঙ্গে ১৮ দফা বাস্তবায়নে কাজ করছে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র আবু তালেব শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহামারি কাটিয়ে আমরা আবার নতুন করে শুরু করতে পেরেছিলাম। আবারও লকডাউনের ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা একেবারে শেষ করে দিয়েছে আমাদের। বর্তমানে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ফাঁকা হয়ে পড়ছে। বেকার হয়ে পড়বেন অন্তত অর্ধ-লক্ষাধিক শ্রমিক।

সমুদ্র সৈকতে পুলিশ, সেনাবাহিনীর টহলের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে

হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারলাম না। কিন্তু আবারো লকডাউন বিপদে ফেলল ব্যবসায়ীদের। সব হোটেল আবার ফাঁকা হলো।

হোটেল পিংসোর ব্যবস্থাপক সামিউল আলম শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত লকডাউনে কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সেই রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আবার লকডাউন দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত লকডাউনে যে লোকসান হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আবারো লকডাউনের কবলে পড়ছে এ শিল্প। এবার হয়তো কোটি টাকা লোকসানে পড়তে হবে।

ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে গত ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ পর্যন্ত কক্সবাজারের পর্যটন খাতে আয় হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আর এসব আয় থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা।

জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধবিষয়ক কমিটির সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। যা কার্যকর করতে জেলাব্যাপী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং প্রাণহানি কমাতে জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি সতর্ক এবং কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। সতর্কতার পাশাপাশি জনসমাগম এড়িয়ে চলা, মাস্ক পরা এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

শুক্রবার ২ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫৮০ জন ছিল। এর মধ্যে গত ১ মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলায় মৃত্যুবরণ করেছে ৮৩ জন। তার মধ্যে ১০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১.২৬%।

এসপি