নববধূর গায়ে মদ ঢেলে পবিত্র করার চেষ্টা, বিক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গার আড়তপট্টি এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশন চুয়াডাঙ্গা শাখা
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় পবিত্রতার নামে প্রকাশ্যে নববধূর শরীরে মদ ছিটানো হয়েছে। একই সঙ্গে একঘরে করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নবদম্পতির ওপর চালানো হচ্ছে মানসিক নির্যাতন।
ডোমের ছেলে হয়ে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের মেয়ে বিয়ে করায় নবদম্পতির ওপর এমন নির্যাতন চালান সমাজপতিরা। পাশাপাশি নবদম্পতিকে ২০ দিনের মধ্যে সারাদেশের ডোম সমাজের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর নির্দেশও দেন। ২৩ মার্চ রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গার স্টেশন সংলগ্ন মাছের আড়তপট্টি এলাকায় সালিস বসিয়ে এ নির্দেশ দেন ডোম সমাজপতিরা।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (০৩ এপ্রিল) দুপুরে মাছের আড়তপট্টি এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশন চুয়াডাঙ্গা শাখা।
এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবি জহির রায়হান, বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশন চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস মলয় ও সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত দাস।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পবিত্রতার নামে প্রকাশ্যে নববধূর শরীরে ছিটানো হয়েছে বাংলা মদ। চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। সভ্য সমাজে জাতে তোলার অজুহাতে নববধূ এবং তার পরিবারের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে; তা আইনবহির্ভূত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। ঘটনাটি নারী জাতির জন্য অবমাননাকর এবং লজ্জার। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
এদিকে, বিচারের নামে হেনস্তা, মানসিক নির্যাতন বন্ধ এবং নির্যাতিত পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশন। শুক্রবার (০২ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে এ আবেদন জানান ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।
আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গার সাতগাড়ি এলাকার ডোম সম্প্রদায়ের এক যুবক দুই মাস আগে বড়বাজার মাথাভাঙ্গা সেতু এলাকার বাশফোঁড় সম্প্রদায়ের নারীকে বিয়ে করেন।
ডোমের ছেলে হয়ে বাশফোঁড় সমাজের মেয়ে বিয়ে করায় ডোম সমাজের জাত গেছে বলে অভিযোগ তুলে বিচারের আয়োজন করেন সমাজিপতির।
একই সঙ্গে ডোমের পরিবারকে একঘরে করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ২৩ মার্চ সালিস বৈঠক ডাকেন রতন, দুখু, চলুয়া, ভুটকা, বাদল হিরুসহ ডোম সমাজপতিরা। বৈঠকে নববধূকে বাশফোঁড় সম্প্রদায় থেকে ডোম সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে পবিত্র করার নির্দেশ দেন সমাজপতিরা।
নির্দেশ অনুযায়ী ৫০-৬০ পুরুষের সামনে নববধূর শরীরে বাংলা মদ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ডোমের পরিবারকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা, ২০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ডোম সম্প্রদায়ের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানো এবং বাবার বাড়ি গেলে নববধূ কোনো প্রকার খাবার গ্রহণ করতে পারবে না বলে নির্দেশ দেন সমাজপতিরা।
বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশনের নেতারা জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসেও এ ধরনের বিচারব্যবস্থা দেখতে হচ্ছে আমাদের। তবে ডোম সম্প্রদায়ের যুবকরা এখন এসব কুসংস্কারবিরোধী। তারা সমাজপতিদের ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। সমাজপতিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলেই এসব কুসংস্কার বন্ধ হয়ে যাবে।
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক (ডিসি) নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান বলেন, ডিসির দেওয়া অভিযোগটি পুলিশ সুপারের কাছে এসেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
আফজালুল হক/এএম