এ বছর রংপুর থেকে ২ লাখ মেট্টিক টন আলু বিদেশে রফতানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার কৃষক ও কৃষিকে বাঁচাতে কাজ করছে। উৎপাদিত কোনো ফসলই যেন নষ্ট না হয় সেই ব্যাপারে কৃষি বিভাগও সজাগ। এফএও আলু রফতানির ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালীকরণের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।

এখন আমাদেরকে উদ্বৃত্ত আলু নিয়ে কাজ করতে হবে। আলু রফতানির প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতায় রুপান্তরিত করতে হবে। যাতে সবার মধ্যে রফতানিকারক হবার আগ্রহ তৈরি হয়। একই সঙ্গে আলু রফতানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ উপযোগী আলুর জাত উদ্ভাবিত করতে হবে।  

শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিন নম্বর পায়রাবন্দ ইউনিয়নে আলু রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধনী আয়োজনে মেসবাহুল ইসলাম এ কথা বলেন। 

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা -এফএও, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং সারা বাংলা কৃষক সোসাইটি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব বলেন, বাংলাদেশ প্রতি বছর ১ কোটি ১০ লাখ মেট্টিক টনের বেশি আলু উৎপাদন করে। যার মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ মেট্টিক টন উদ্বৃত্ত। উদ্বৃত্ত আলুর ব্যবহারের উপায় বের করার সঙ্গে মূল্য সংযোজন ধারায় সম্পৃক্ত কৃষক এবং অন্যদের জন্য বিশাল সমৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এর গুরুত্ব সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয় ভালোভাবে অবহিত রয়েছে। এ কারণে রফতানির ওপর গুরুত্ব বাড়িয়েছে সরকার।

তিনি আরও বলেন, আলুচাষিরা করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে তাদের ফসল উত্তোলন করেছে। অনেকে তাদের বিনিয়োগ থেকে লাভ করতে পারবেন কিনা বা তাদের আলু নষ্ট হবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু আলু রফতানিকারকদের সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্ব এবং উত্তম কৃষি চর্চা অনুযায়ী মানসম্পন্ন আলু উৎপাদনের ফলে তাদের সকল আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

মেসবাহুল ইসলাম বলেন, এফএও এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আলুচাষিদের সংগঠনগুলোকে রফতানিকারক, রিটেইল চেইন শপ এবং কোল্ড স্টোরেজের সঙ্গে যুক্ত করেছে। রফতানিকারকদের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে গত বছর সংগঠনগুলো মোট এক হাজার মেট্রিক টন আলু রফতানি করেছিল। এ বছর আরও অধিক রফতানিকারকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। এতে ন্যায্যমূল্যে আলু বিক্রি ও রফতানি করা হবে। রংপুর থেকে এবার ২ লাখ মেট্টিক টন আলু মালয়েশিয়ায় যাবে। এছাড়া নেপাল ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আলু রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে এফএও প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন বলেন, এফএও রফতানির পাশাপাশি দেশীয় ভোক্তাদের জন্য মানসম্পন্ন আলু উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তা করছে। বীজ আলুর ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি খামার স্তরের স্টোরেজ সুবিধা স্থাপনে বেসরকারি খাতকে নিযুক্ত করে চলেছে। ২০১৮ সাল হতে রংপুরে ৩টি আলু উৎপাদনকারী সমবায় সংগঠনকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সমবায়গুলোকে আলু উৎপাদনের জন্য ‘উত্তম কৃষি চর্চা’ বিষয়ের পাশাপাশি আর্থিক ও ডিজিটাল  প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এফএওর সিনিয়র উপদেষ্টা মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষনা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. এছরাইল হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার ওয়াহেদ, রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ও সারাবাংলা কৃষক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক সর্দার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আলু উৎপাদনকারী, রফতানিকারক, সরকারি কর্মকর্তা, এফএও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এবং মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, পীরগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার আলুচাষিরা উপস্থিত ছিলেন।  

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস