ভুল বোঝাবুঝিতে রণক্ষেত্র সালথা
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে থাকা এক সরকারি কর্মচারীর লাঠিপেটায় এক ব্যক্তির গুরুতর আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদ, থানা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়সহ বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসময় ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে এসব হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ফরিদপুর, ভাঙ্গা ও পার্শ্ববর্তী থানার অতিরিক্ত পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে চা খেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নটাখোলা গ্রামের মো. জাকির হোসেন মোল্যা । এ সময় সেখানে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি উপস্থিত হন।
জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই সহকারী কমিশনারের গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তি তার কোমরে সজোরে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে তার কোমর ভেঙে যায়। আহত জাকির হোসেনকে উপজেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে জাকির হোসেনকে আহত করার খবরে সেখানে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আরও গ্রামবাসী জড়ো হন। পরে সেখানে সালথা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌঁছালে উত্তেজিত জনতা তাদের ওপর হামলা করেন। এতে মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা সালথা থানা অভিমুখে রওনা হয়ে থানা ঘেরাও করেন।
এরপর একে একে উপজেলা পরিষদ, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, ইউএনওর বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় ইউএনওর গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এর আগে এ ধরনের ঘটনা সালথার মানুষ কখনো দেখেনি। আমি প্রাণে বেঁচে গেছি। সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদে গিয়ে আটকে যাই। চারদিকে শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া দেখতে পাই। অন্য কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। কোনোরকমে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে বের হয়ে আসি।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুজ্জামান বলেন, সহকারী কমিশনারের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফুকরা বাজারে পুলিশ পৌঁছায়। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে এসআই মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর জানান, আমার বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান বিপিএম বলেন, লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে স্থানীয় জনতার সঙ্গে কর্মকর্তাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়। তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণির বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইলে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বি কে সিকদার সজল/এসএসএইচ/জেএস