নিহত বিথীর স্বজনদের আহাজারি

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ১৮ ঘণ্টা পর মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রমজানবেগ খাসকান্দি এলাকায় বিথী আক্তার (২৫) ও তার মেয়ে আরিফার (১) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় দেখা যায়, মৃত মা বিথী বেগম বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন তার মেয়ে আরিফাকে।

সোমবার (৫ এপ্রিল) বেলা ১টার দিকে স্বজনদের কাছে মা-মেয়ের মরদেহ বুঝিয়ে দেন উদ্ধারকারীরা। পরে ২টার দিকে তাদের মরদেহ নিয়ে আসা হয় মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার খাসকান্দি রমজানবেগ গ্রামে। এ সময় স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। পরে গোসল করানোর সময় মা ও মেয়েকে আলাদা করেন স্বজনরা।

নিহত বিথী আক্তার ওই গ্রামের আরিফ কাজির স্ত্রী। আরিফ ডোকেরেটরের লাইট মিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি স্ত্রী, সন্তান ও শাশুড়িকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায়।

সরেজমিনে ওই বাড়িতে দেখা যায়, মাটিতে শুয়ে বিলাপ করছেন নিহত বিথীর ননদ রুপা ও জাল জিয়াসমিন। জিয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা রাত আমরা লাশ পাওয়ার আশায় নদীর পারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটু পর পর অফিসার আসে আর আমাদের তাড়িয়ে দেন নদীর পাড় থেকে। সারা রাত তারা পরিদর্শন করলেন। কিন্তু নদী থেকে লাশ ওঠানোর কোনো কাজই করেননি। কতজনের হাতেপায়ে ধরে অনুরোধ করলাম, তাড়াতাড়ি আমাদের স্বজনের লাশগুলো উঠিয়ে দেওয়ার জন্য। কেউ কথা শুনল না। তারা ইচ্ছা করলে লঞ্চ ডোবার কিছুক্ষণ পরেই লাশ উত্তোলন করে দিতে পারতেন। তারা যদি লাশ সময়মতো উঠিয়ে দিতেন, তাহলে আমার জা ও তার মেয়ের লাশ এতটা ফুলত না।

মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কান্না রুপা বলেন, আমার ভাবি লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর ভাবছিলেন তিনি আর বাঁচবেন না। তাই বুকের ধনকে বুকেই ধরে রেখেছিলেন। যারা আমার ভাইয়ের বউ আর ভাতিজির লাশ উদ্ধার করেছে, তারাও এ দৃশ্য দেখে কেঁদেছে।

এলাকার চর মাশুরা কবরস্থানে নিহত বিথী ও তার মেয়ে আরিফাকে দাফন করা হয়েছে বিথীর মা পাকিজা বেগমের পাশে। এর আগে পাকিজা বেগমকে দাফন করা হয় কারণ, একই লঞ্চে ডুবে পাকিজা বেগমও নিহত হন।

পরিবার জানায়, শিশু আরিফার শরীরে এলার্জি দেখা দেওয়ায় তাকে রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলন বিথী ও তার মা পাকিজা বেগম। পরে সাবিত আল হাসান লঞ্চে চড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। পরে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটের দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চটি ডুবে যায়। পরে লঞ্চডুবির খবর পেয়ে আরিফ বিথীর মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পেয়ে ছুটে যান তারা লঞ্চডুবির ঘটনাস্থলে।

ব.ম শামীম/এনএ