মেয়ের বিয়ের ঋণ শোধ করতে রিকশা চালাই
আবদুস সালাম
‘৪০ বছর ধরে রিকশা চালাই। এখন আর সেই আগের মতো টানতে পারি না। বয়স হয়েছে, একবার ভাড়া নিলে আরেকবার বিশ্রাম নিতে হয়। সরকারিভাবে এখনো বয়স্ক ভাতা পাই না। একদিকে পরিবার নিয়ে খাইতে হবে, আরেকদিকে কিস্তির বোঝা মাথায়। সব চিন্তা মাথায় নিয়ে ভাড়া রিকশা চালাই। নিজের একটা রিকশা থাকলেও চলত। কিছু টাকা বেশি আয় হইত।’ কথাগুলো বলছিলেন রিকশাচালক আবদুস সালাম।
চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মহামায়া গুচ্ছগ্রাম এলাকায় থাকেন আবদুস সালাম (৭০)। ৪০ বছর ধরে রিকশা চালান। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি তার। তাই বৃদ্ধ বয়সেও সংসারের হাল ধরে আছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী যখন লকডাউন চলছে, তখনো আবদুস সালামকে বের হতে হয়েছে রিকশা নিয়ে। কারণ, পরিবারের খাবার জোগান হয় তার দৈনিক আয় থেকে।
কিস্তির বোঝা কেন মাথায়, এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুস সালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়ে দুটিকে কিস্তির টাকা উঠিয়ে বিয়ে দিয়েছি। এখন সেই ঋণ শোধ করতেই রিকশা চালাতে হচ্ছে। লকডাউনে তেমন রুজি নেই। তারপরও রিকশা চালাতে হয়। না হলে কিস্তি পরিশোধ করব কীভাবে? দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে এখন আমি নিঃস্ব। আমার একটি ছেলে আছে। সে অটোরিকশা চালায়। তার বউকে নিয়ে সে আলাদা থাকে। আমার রোজগার আমাকেই করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
দৈনিক কেমন আয় হয়, উত্তরে বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪-৫টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় করি। বয়স হয়েছে। এখন আর আগের মতো চালাতেও পারি না। আর এখন লকডাউনের সময় দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মতো পাই।
কান্নাচোখে আবদুস সালাম বলেন, নিজে খাই আর না খাই, পরিবারকে তো খাওয়াতে হবে। আমার যদি একটা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থাকত, তাহলে এত কষ্ট করতে হতো না। হয় নিজে চালাতাম, না হয় ভাড়া দিতাম। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, আমাকে বয়স্ক ভাতা ও একটি অটোরিকশা দিলে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারতাম।
শরীফুল ইসলাম/এনএ