নাটোরে মাদরাসার প্রিন্সিপালকে গালি দিতে নিষেধ করায় অফিস সহকারীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও তার বাবা হাসেম ব্যপারীর বিরুদ্ধে। 

এ ঘটনায় সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ভুক্তভোগী অফিস সহকারী মোস্তফা ব্যপারী নাটোর সদর থানায় বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর আগে রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে নাটোর সদর উপজেলার জংলী হামিদিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

অভিযুক্ত মাদরাসা সভাপতি সাইফুল ইসলাম সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি এবং তার বাবা হাশেম ব্যপারী একই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনিও বহিষ্কৃত।

ভুক্তভোগী অফিস সহকারী মো. মোস্তফা ব্যপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে মাদরাসা সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও তার বাবা প্রিন্সিপালের রুমে যান। এ সময় তারা দুইজনই সম্ভবত টাকা-পয়সার হিসাব নিকাশ নিয়ে প্রিন্সিপালকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। 

প্রিন্সিপালের রুমে উত্তেজনা দেখে আমিও সেখানে যাই। গিয়ে শুধু এটুকুই বলি যে, এটা অফিস এখানে গালাগালি করার কি দরকার। একথা বলতেই সাইফুল (ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি) আমাকে বলে, এই তুই কথা বলার কে? তারপর সাইফুলের বাবা আমাকে ঘুষি মারে। এরপর সাইফুলও এসে আমাকে মারতে শুরু করে। পরে অন্যান্য শিক্ষকরা সবাই এসে ওদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করে।

ভুক্তভোগী আরও জানান, এলাকায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্ম করে থাকে সাইফুল ইসলাম। তাদের উশৃঙ্খল ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানটির সবাই অতিষ্ঠ, কিন্তু তাদের প্রভাবে কোনো শিক্ষক প্রকাশ্যে কথা বলতে পারেন না। 

বিদ্যালয়ের অন্য একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানায়, সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে এনটিআরসি'র মাধ্যমে ৯ জন শিক্ষকের নিয়োগ হয়। ‌তারপর থেকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাদের থেকে মোটা অংকের টাকার দাবি করে আসছেন। কিন্তু ওই সব শিক্ষকরা অত্র মাদরাসার উন্নয়নে টাকা দিতে রাজী হলেও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিতে রাজি ছিলেন না। মূলত সেই বিষয় নিয়েই রোববার মাদরাসার প্রিন্সিপালের সঙ্গে সভাপতি ও তার বাবার তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল। তারই এক পর্যায়ে অফিস সহকারী প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকে উত্তেজিত সভাপতি ও তার বাবাকে গালিগালাজ করতে নিষেধ করে মারপিটে শিকার হন।

মাদরাসার প্রিন্সিপাল জালাল উদ্দিন বলেন, মোস্তফা ব্যপারী অফিস সহকারী হলেও দীর্ঘদিন ধরে কাজ করায় সে মাদরাসায় সবার কাছে পরিচিত। সে সুবাদে সবাই তাকে সম্মান করে। গতকাল তার সাথে যা ঘটেছে তা অন্যায় হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে চাচ্ছি না।

এইসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাদরাসা সভাপতি ও যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল অফিস রুমে আমার বাবার সঙ্গে ওই অফিস সহকারীর কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু সেখানে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। এছাড়া এই বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে মিমাংসা করে নিয়েছি।

এ বিষয়ে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, সকাল থেকে আমি থানাতে নেই। এসপি অফিসে মিটিং এ আছি। থানায় গেলে অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারব।

আরকে