হরতালে বাস কাউন্টার খোলা থাকলেও নেই যাত্রী
বিএনপি-জামায়াতসহ গণতন্ত্র মঞ্চের ডাকা হরতালে সকালে রংপুর থেকে ঢাকাগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বাস স্ট্যান্ডে কাউন্টার খোলা থাকলেও দেখা মিলছে না যাত্রীর। এ কারণে অলস সময় কাটাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত রংপুর নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে সকাল পৌনে সাতটায় কুড়িগ্রাম এবং সোয়া সাতটায় বুড়িমারি লোকাল ট্রেন রংপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা বলছেন, বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ কারণে ভোর থেকে কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু হরতালের কারণে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে সকালে কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাস কাউন্টার খোলা থাকলেও যাত্রী নেই। টিকেটের জন্য নেই কারো কোনো তোড়জোড়। অনেকটাই অলস সময় পার করছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
বিজ্ঞাপন
নাবিল পরিবহনের সুপারভাইজার মিজানুর রহমান বলেন, সকাল থেকে বাস নিয়ে ঢাকা যেতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু যাত্রী সংকটে এখন পর্যন্ত (৮টা পর্যন্ত) কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া গেলে বাস ছেড়ে যেতে পারে।
সকাল থেকে এসআর পরিবহন, এনা পরিবহন, শাহ ফতেহ আলী, আগমনী পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার যাত্রী শূন্য দেখা গেছে। কিছু কিছু কাউন্টার ছিল তালাবদ্ধ। তবে বেশিরভাগ বাস শ্রমিক ও চালককে বাসে এবং কাউন্টারে শুয়ে বসে সময় কাটাতে দেখা যায়। যাত্রী না থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান তারা।
একই চিত্র দেখা গেছে রংপুর কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে আন্তঃজেলা রুটের কোনো বাস ছাড়েনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। বাস টার্মিনালে অন্যান্য দিনের মতো যাত্রী চোখে পড়েনি।
আরও পড়ুন
এদিকে সকাল ছয়টা থেকে হরতাল শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হরতালের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের কাউকে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, দলীয় কার্যালয় এবং জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সকাল ৮টা) আন্তঃজেলা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক রয়েছে হালকা যানবাহন চলাচল। তবে সড়কে অন্যান্য দিনের মতো যানবাহনের চাপ নেই। এতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী, শিক্ষকের পাশাপাশি কর্মজীবী মানুষদের। সকাল থেকে কিছু দোকানপাট খুলতে শুরু হয়েছে।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, আন্তঃজেলাসহ সব রুটেই গাড়ি চলাচল করবে। আমাদের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করেনি। তবে যাত্রী সংকট রয়েছে।
রংপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, হরতালে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। এরপরও শহর ও মহাসড়কে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল শনিবার বিএনপি-জামায়াতসহ গণতন্ত্র মঞ্চ হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত মিছিল করেনি। তবে আজ রোববার মিছিল করবে বলে দলটির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় হরতাল বিরোধী শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, বিএনপি গতকাল ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের আয়োজন করেছিল। সেই সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ার শেল ছুড়ে পণ্ড করে দিয়েছে, এমন অভিযোগ এনে আজ রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে মহাসমাবেশে পুলিশের বাধাদান ও নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীও হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একই দিনে গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা দলগুলোও হরতাল আহ্বান করেছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ