জমি লিখে না দেওয়ায় বাবার হাত ভাঙলেন ২ ছেলে
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ইয়াকুব মালিতা
মাস দুয়েক আগে সড়ক দুর্ঘটনা ডান পা ভেঙে যায় বৃদ্ধ ইয়াকুব মালিতার। টানা ২ মাস চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে রোববার (১১ এপ্রিল) বিকেলে বাড়ি ফেরেন তিনি। বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পর দুই ছেলে জাহিরুল ও সাদিমান জমিজমা নিজেদের নামে লিখে দিতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের জন্য চাপ দেয়।
এতে অস্বীকৃতি জানালে ঘরের মধ্যে বাবাকে আটকে ঘণ্টাব্যাপী কাঠ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেন দুই ছেলে। এতে একটি হাত ভেঙে যায় ইয়াকুব মালিতার।
বিজ্ঞাপন
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নবিননগর গ্রামের পূর্বপাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটে। আহত ইয়াকুব মালিতা (৬০) ওই এলাকার মৃত সাবেদার মালিতার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ইয়াকুব মালিতার চার স্ত্রী। চতুর্থ স্ত্রী ও তার ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন তিনি। ২ মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তার ডান পা ভেঙে যায়। এতে ২ মাস চিকিৎসা শেষে রোববার বাড়ি আসার পর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দুই ছেলে স্ট্যাম্প নিয়ে জমিজমা ও বসতবাড়ি লিখে দিতে বলেন বাবাকে।
ইয়াকুব এখন সম্পত্তি ছেলেদের দিতে অস্বীকৃতি জানালে তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয়। পরে দুই ছেলে জাহিরুল ও সাদিমান একটি ঘরে বাবা ইয়াকুব মালিতার হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে। কাঠ দিয়ে ও ধারালো অস্ত্রের উলটো পিঠ দিতে বাবাকে পিটিয়ে জখম করেন। পরে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে উদ্ধার করে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বিজ্ঞাপন
তারা আরও বলেন, এর আগেও এই জমিজমা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বাবাকে মারধর করেছিল তারা। আজ আবারও তারা পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ইয়াকুব মালিতা। পাশেই চতুর্থ স্ত্রী ও তার ছেলে শয্যার পাশে বসে আছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইয়াকুব মালিতা ঢাকা পোস্টকে জানান, নিজেকে ওই দুই ছেলের বাবা বলে পরিচয় দিতেও ঘৃণা করছে আমার। যাদের কষ্ট করে মানুষ করেছি; আজ তারাই সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় নির্মম নির্যাতন করেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ওহিদুল ইসলাম বলেন, এটি আসলেই মর্মান্তিক একটি ঘটনা। জমিজমা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বাবাকে নির্মম নির্যাতন করেছে দুই ছেলে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সোহানা আহমেদ বলেন, ইয়াকুব মালিতার অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহৃ আছে। এছাড়াও ডান হাত ভেঙে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আফজালুল হক/এমএসআর