বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলী ও গনেশপুর এলাকায় কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণে শিল্পপার্ক স্থাপনের প্রাথমিক প্রস্তাবনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। কিন্তু যেখানে প্রাথমিকভাবে স্থান নির্বাচন করা হয়েছে তার সবই তিন ফসলি কৃষিজমি। অথচ কর্তৃপক্ষ তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি ও অনাবাদি দেখিয়ে সরকারিভাবে অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছে। এ প্রতিবাদেই ফুঁসে উঠেছে সাত গ্রামের হাজারো মানুষ। এরই মধ্যে জমি রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর জের ধরেই মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কে এক কিলোমিটার জুড়ে হাজারো মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেন। এ সময় ‘সিদ্ধান্ত বাতিল করুন, না হলে বুকে গুলি করুন’ এমন স্লোগান গায়ে লিখে প্রতিবাদ জানানো হয়। 

জমি রক্ষা আন্দোলন কমিটির ব্যানারে বেলা সাড়ে ১১টায় থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শিবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদ সাবু, মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোকলেছার রহমান খলিফা, আওয়ামী লীগ নেতা মোকলেছার রহমান মুন্নু, যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা রাকিব আকন্দ প্রমুখ। 

গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) একটি চিঠি পাঠায় সংস্থার বগুড়া জেলা কার্যালয়ে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বগুড়ায় একটি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপার্ক স্থাপনের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়েছিল। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন বগুড়ায় শিল্পপার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান বাদ দেয়। এরপর বিসিক নতুন করে বগুড়ার তিনটি স্থান পরিদর্শন করে। 

পরিদর্শনে শিবগঞ্জের দুটি ইউনিয়নের শিবগঞ্জ ও মোকামতলা ইউনিয়নের উথলি, নারায়ণপুর, সন্নাসী, ধোন্দাকোলা, চাঁনপুর, খালিমপুর, ছলেমান ও হরিপুর এলাকায় ৫০০ একর জমি অনাবাদি বা এক ফসলি হিসেবে পাওয়ার কথা জানানো হয়। সেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ সহজ হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এই জমি বরাদ্দের সম্মতি প্রদানসহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

কৃষকরা বলছেন, বিসিক প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ না করে আমাদের এলাকার ৫০০ একর উর্বর তিন ফসলি কৃষি জমিকে অনুর্বরও এক ফসলি দেখিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা দিয়েছে। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে কয়েক হাজার মানুষ মহাসড়কে দাঁড়িয়ে ভূমি রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। 

এলাকাবাসী জানান, শিবগঞ্জের এই সাত গ্রামে অন্তত ১৮ হাজার লোক বসবাস করেন। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি সনাতন ধর্মের মানুষ। বিসিকের প্রস্তাবিত ৫০০ একর জমির মধ্যে সাধারণ মানুষের বসতিও রয়েছে।  

এলাকার প্রবীণ শিক্ষক নিশিকান্ত সাহা বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা ভুল করে আমাদের সঙ্গে কথা না বলে তিন ফসলি কৃষি জমিকে এক ফসলি দেখিয়ে পার্ক করার প্রস্তাবনা করেছেন। এক বিঘা জমিতে আমি কাঁচা মরিচ, হলুদসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করে সংসার চালাই। এই জমি চলে গেলে আমি কীভাবে সংসার চালাব?

ধোন্দাকোলা গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ সরকার বলেন, শিবগঞ্জ কৃষির জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা। এখানে ফসলি জমিতে পার্ক হবে এটা কেমন কথা। আমার জমি দিতে রাজি নই। প্রয়োজনে প্রাণ দিব। 

ভূমি রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহী সানোয়ার শাহীন বলেন, বগুড়ার শিবগঞ্জ দেশের সবজি উৎপাদনের অন্যতম এক কারখানা। এই এলাকায় তিন ফসলি কৃষি জমিতে পার্ক নির্মাণ করা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। এই কারণে আমরা সরকারের এই প্রাথমিক প্রস্তাবনার বিরোধিতা করছি। আমরা আসলে কৃষি কাজ করেই বাঁচতে চাই। 

এর আগে গত ৭ এপ্রিল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবিরের কাছে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। 

এ বিষয়ে ইউএনও আলমগীর কবির বলেন, আমি অফিসিয়ালি কিছু জানি না। তবে এলাকার লোকজনের মুখে ঘটনা শুনেছি। সরকারি নির্দেশনা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব। তবে যতদূর জানি এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। 

তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়ে বগুড়ার বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান বলেন, আমরা এলাকার লোকজনের কাছ থেকেই এই তথ্য জেনেছি। এখানে শিল্প পার্ক হলে কৃষকরাই উপকৃত হবেন। কর্মসংস্থান হবে প্রায় এক লাখ মানুষের। ওই এলাকার ৬০ শতাংশ লোক শিল্পপার্ক চান, ৪০ শতাংশ বিরোধিতা করছেন।

সাখাওয়াত হোসেন জনি/আরএআর