শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হলেও চাষিদের মুখে হাসি নেই/ফাইল ছবি

শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে দাম না পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি নেই। চাষিরা বলছেন, গতবারের তুলনায় দাম এবার অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। 

জানা গেছে, গত বছর এই সময় বাজারে মরিচের দাম ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা (প্রতি কেজি)। এবার বাছাই করা মরিচ বাজারে চলছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এতে চাষিদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

ভেদরগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন। আর এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন।

কৃষকরা জানান, এবার মরিচের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় মরিচ গাছ তেমন মরেনি। তাছাড়া এবার রোগবালাই ও পোকামাকড়ও আক্রমণ করেনি। কৃষি অফিসের পরামর্শে রোগবালাই দমনের জন্য সব ধরনের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফলন ভালো হলেও দাম নেই বাজারে।

ভেদরগঞ্জের মোল্লাকান্দির কৃষক হারুন শেখ বলেন, মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। এতে করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ভেবেছিলাম গত বছরের মতো লাভ হবে। কিন্তু বাজারে গিয়ে মাথায় হাত। উৎপাদন ভালো হলেও এবার মরিচের দাম গত বছরের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সখিপুরের কৃষক রাজ্জাক বকাউল আক্ষেপ করে বলেন, আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না। গাড়িতে করে এনেছি, না বেচতে পারলে আবার নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। গত বছর এ সময়ে মরিচ বিক্রি করেছিলাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। আর এখন বিক্রি করলাম মাত্র ১৩০ টাকা কেজি দরে। গত বছর আমরা কম দামে বিক্রির পর পরই বাজারে মরিচের দাম বেড়ে গিয়েছিল। এবার কী হয় জানি না।

চরকুমারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও মরিচ ব্যবসায়ী মাহাবুর রহমান আক্তার বলেন, এবার এই উপজেলায় মরিচ চাষিদের মাথায় হাত। তারা মরিচ চাষ করে হতাশা ছাড়া কোনো কিছু পাচ্ছে না। হঠাৎ করে বাজারে মরিচের আমদানি বেড়ে গেছে। এতে করে দাম কমে গেছে।

আরেক ব্যবসায়ী ফজলে কাজী বলেন, আমি হাটে হাটে ঘুরে মরিচ কিনি। ১০ বছর ধরে শুকনো মরিচের ব্যবসা করি। এত কম দামে মরিচ বেচাকেনা হয়নি। গত ২০ দিন আগেও মরিচের মণ ছিল ৭ হাজার ২০০ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর এখন ৫ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে মরিচ পাওয়া যাচ্ছে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর ভেদরগঞ্জে মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু মরিচের দাম কম হওয়ায় লোকসানের ঝুঁকিটা বেড়ে গেছে চাষিদের। গত মৌসুমে মরিচের দাম কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হলেও এবার একই মৌসুমে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। 

সৈয়দ মেহেদি হাসান/এসপি/জেএস