নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন জয়পুরহাট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছুল আলম দুদু। এ সময় তিনি শিক্ষকদের কাছে ভোটও চান বলে জানিয়েছেন ওই সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধুরইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ‍অনুষ্ঠানে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ২৫টি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০০ শিক্ষক অংশ নেন। সভায় সামছুল আলম দুদুকে প্রধান অতিথি করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচবিবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিহাদ মণ্ডল।

সভায় পাঁচবিবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, সহ-সভাপতি মহিরউদ্দিন মণ্ডল, মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরী, আওলাই ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী তাওহীদ, পাঁচবিবি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ মণ্ডল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমরা বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পাঁচবিবি পূর্ব অঞ্চলের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে বসেছিলাম। এতে পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা, বালিঘাটা, মোহাম্মদপুর, আটাপুর ও আওলাই ইউনিয়নের ২৫টি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০০ জন শিক্ষক অংশ নেন। আমরা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের ক্যাটাগরি আলাদা করে ইতোমধ্যে বসা শুরু করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে শিক্ষকদের সাথে বসছিলাম। এরপরে বসব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সঙ্গে। এর আগে পাঁচবিবি বণিক সমিতির সঙ্গে বসেছিলাম। যেহেতু ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন প্রচার-প্রচারণা নেই, এজন্য উনাদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় সভা করছি।

ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন পাঁচবিবি উচাই জেরকা এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফির উদ্দিন আকন্দ। তিনি বলেন, মঞ্চ করে প্রোগ্রাম ছিল। তিনি (এমপি) বলেছেন, আমি শেষ বারের মতো এমপি প্রার্থী। আপনারা তো বিভিন্ন দায়-দায়িত্বে থাকেন। আমার ভালো-মন্দ দিক একটু বিবেচনা করবেন।

পাঁচবিবির সড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান বলেন, আমরা সেখানে অনেক শিক্ষক উপস্থিত ছিলাম। এর আগে তিনি শিক্ষকদের নিয়ে এমন কোন প্রোগ্রাম করেননি। আজকের প্রোগ্রামে তিনি কী কী উন্নয়ন কাজ করেছেন, সেসব কথা বলেছেন। সর্বোপরি তিনি বলেছেন, এটিই তার জীবনের শেষ নির্বাচন। তার বক্তব্য আবেগপ্রবণ ছিল। কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে তাকে নির্বাচিত করতে বলেছেন এবং তিনি ভোট চেয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে জয়পুরহাট-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম রায়হান মণ্ডল মনু বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছুল আলম ‍দুদু নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না। বিভিন্ন জায়গায় তিনি মিটিং, মতবিনিময় করছেন। শিক্ষকদের নিয়েও আলোচনা করছেন। হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করছেন। প্রার্থী গেলে তার সঙ্গে ১০ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল যাচ্ছে। এটি আচরণবিধির লঙ্ঘন। কিন্তু নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আজিজ মোল্লা বলেন, পাওয়ার পার্টির (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী সুস্পষ্ট আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। তিনি বিভিন্ন পেশার মানুষদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় করছেন। তাছাড়া গত কয়েকদিন আগে একটা এবং আজকে আরেকটা জায়গায় শিক্ষকদের নিয়ে নির্বাচনী বক্তব্য রেখেছেন এবং বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছেন। এখন যারা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করবেন, তাদের নিয়ে একজন প্রার্থী কী করে এমন প্রোগ্রাম করতে পারে? এসব বিষয় আমার কাছে আচরণবিধি ভঙ্গের শামিল মনে হয়েছে। তাই  বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ করব। তাছাড়া ডিসিকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি, ছবিও দিয়েছি। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সামছুল আলম দুদুর সেলফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় করার বিষয়ে জানেন না বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন পাঁচবিবি উপজেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা সুলতানা। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো প্রার্থী এখন প্রচার-প্রচারণা করতে পারেন না। তবে উনার প্রোগ্রাম কী কেন্দ্রিক ছিল তা জানতে হবে।

জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া আমি উনাকে (প্রার্থী সামছুল আলম দুদু) কল করেছিলাম। তিনি বলেছেন আর এ রকম হবে না। এছাড়া নির্বাচনের অনুসন্ধান কমিটি আছে। উনারা বিষয়টি দেখবেন।

চম্পক কুমার/এসকেডি