বাপু ৬০ হাজার টাকা দিছি তবুও সরকারি ঘর আমার মিলে নাইক্যা। এমন অভিযোগ করেন শেরপুর সদর উপজেলার ৯নং চরমোচারিয়া ইউরিয়নের মুন্সিরচর গ্রামের বিধবা নারী মমতা (৫০)। তিনি ওই এলাকার মৃত ফরিদ মিয়ার স্ত্রী। 

মমতা অভিযোগ করে আরও বলেন, স্বামী মারা গেছেন ১১ বছর আগে। অল্প একটু জায়গায় ছোট একটা ঘর। ঘরের সামনেই স্বামীর কবর। অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম নিজের একটা বড় ঘর হবে। বর্তমান সরকার গরিবের জন্য অনেক কিছু করছে। তাই আমিও ভাবছিলাম আমিও পাঁকা বাড়িতে ঘুমাব। 

কিন্তু সেই স্বপ্ন আমার দুঃস্বপ্নে রূপ নিল। অনেক ধার দেনা করে, গরু বিক্রি করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। ছেলেটা বাজারে চুল কাটে (নাপিত)। সে নিজেও কষ্ট করে কিছু টাকা আমাকে দিয়েছিল। সব মিলে ৬০ হাজার টাকা ৯নং চর মোচারিয়া খোরশেদ চেয়ারম্যানের ভাইস্তা আলগমীরকে দেই।

এরপর সে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে আরও ৭ হাজার টাকা নেয়। দিন গড়িয়ে মাস যায়, কিন্তু আমি সরকারি বরাদ্দের কোনো ঘর পাই নাই। টাকা চাইতে গেলে আলমগীর আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে আসে। বাজে ভাষায় গালিগালাজ করে। বাবা আমি এখন এতগুলো টাকার ঋণের বোঝা টানতে পারি না।

এ বিষয়ে মমতার ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩২) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা নেই অনেক বছর। নাপিতের কাজ করে আর কত টাকা পাই? তবুও কিছু টাকা জমিয়ে মাকে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্বপ্নের ঘর আমাদের মিলল না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল মমিন ঢাকা পোস্টকে জানান, মহিলাটা অনেক অসহায়। ধার দেনা করে ৬০ হাজার টাকা মোচার চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদের ভাতিজা আলমগীরকে দিয়েছিল। কিন্তু আলমগীর তাদের সরকারি ঘর তো পাইয়ে দেয়নি উল্টো তার কাছে টাকা চাইতে গেলে মমতা আপাকে মারতে আসে।

স্থানীয় এলাকাবাসী আলীওল হাসান বলেন, আলমগীরের নামে এলাকায় অনেক অভিযোগ। সে বিভিন্ন সময় গরিব অসহায়দের সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা পয়সা নেয়। কিন্তু কোনো সুবিধা আজ পর্যন্ত কাউকে দেয় নাই।

এ বিষয়ে চরমোচারিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার যুবরাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার কথা আমিও কিছুটা শুনেছি। ওই মহিলাকে ইতোমধ্যে খোরশেদ চেয়ারম্যানের ভাতিজা আলমগীর কিছু টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। হয়তো অল্প অল্প করে সব টাকায় ফিরিয়ে দেবে যা লোকমুখে শুনেছি।

এ ব্যাপারে ৯নং চর মোচারিয়া ইউপি চেয়াম্যান খোরশেদুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং তার ভাতিজা সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরোজ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগী লিখিত কোনো অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাহিদুল খান সৌরভ/এমএএস