বাড়িতে চলছিল দাফনের প্রস্তুতি, ফিরে এলেন সিরাজুল
বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে গত ১ এপ্রিল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যান খুলনার কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম সরদারসহ আটজন। বনের গহীনে ঢুকে পড়েন তারা। ১১ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাঘের আক্রমণে সিরাজুল ইসলামের নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ১৩ এপ্রিল কয়েকটি পত্রিকায় বাঘের হামলায় মৌয়াল সিরাজুল নিহত হয়েছেন এমন খবর প্রকাশিত হয়। তবে বুধবার (১৪ এপ্রিল) সশরীরে বাড়িতে ফিরে এসেছেন তিনি।
এসবের কিছুই জানতেন না সিরাজুল। মধু সংগ্রহ করে বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারেন- বাঘের আক্রমণে তিনি নিহত হয়েছেন। দ্রুত সেখান থেকে ফিরে আসেন। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকা পোস্টকে এমনটাই জানান সিরাজুল ইসলাম সরদার।
বিজ্ঞাপন
কয়রার গোবরা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য আমরা আটজন সুন্দরবনে যাই। মধু সংগ্রহে যাওয়ার আগে সেখান থেকে একজনকে নৌকায় রেখে যাওয়া হয়। তিনি কিছুক্ষণ থাকার পর নৌকায় বসে তার এলাকায় ফোন করেন। ফোনে তিনি বলেছেন আমাকে রেখে ছোট ভাইকে নিয়ে গেছে। এটা আবার অপরপ্রান্তে যিনি ছিলেন তিনি ভুল শুনেছেন। তিনি আবার কানে কম শোনেন। তিনি বুঝেছেন ছোট ভাইকে (সিরাজুল) বাঘে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে একে একে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার অনেকেই এটিকে ছড়িয়ে দেয়। বাড়ির লোকজন শুনেছে আমাকে বাঘে নিয়ে গেছে। একখান পা ও একখান হাত পাওয়া গেছে। তাই শুনে বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি শুরু করে। কাফনের কাপড় আর বরফও কিনে আনে। শুধু কবরটা খুঁড়তে বাকি ছিল।
তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজনরা চিন্তায় পড়ে যান। তবে তখনও আমরা কিছুই জানতাম না। কারণ আমরা সুন্দরবনের অনেক ভেতরে চলে গিয়েছিলাম। মধু খুঁজতে ব্যস্ত ছিলাম। পরে বাড়িতে ফোন করি। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তারা ঘটনা বলে। দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসতে বলে। সেখান থেকে দ্রুত ফরেস্ট অফিস হয়ে বাড়িতে আসি। শুনেছি ফরেস্ট অফিসের তিনটি টিম আমাদের খুঁজতে গিয়েছিল। কিন্তু তারা আমাদের পাবে কোথায়। বনের ভেতরে অনেক দূরে ছিলাম আমরা।
বিজ্ঞাপন
সিরাজুল ইসলাম সরদারের বড় মেয়ে সেলিনা খাতুন বলেন, রোববার তারা খবর পান তাদের বাবার নৌকায় বাঘের হামলা হয়েছে। খালেক নামে গ্রামের এক ব্যক্তি এ খবর ছড়ান। তিনি বলেছেন আব্বার একটা পা ও হাত পাওয়া গেছে। তাকে আনা হচ্ছে। এই শুনে মানুষ জড়ো হয়। বরফ, কাপড়চোপড় সব কিছু কিনে আনা হয় রাতারাতি মাটি দেওয়া হবে বলে। বুধবার (১৪ এপ্রিল) বাবার সঙ্গে থাকা একজনকে ফোন দেওয়া হয়। পরে বাবার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান- তার কোনো সমস্যা হয়নি, কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমার মামা ফরেস্ট অফিসে তাকে আনতে যান।
এদিকে গ্রামের অনেকেই যারা ফেসবুকে সিরাজুল ইসলাম সরদারের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন তারা তা মুছে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে সিরাজুল বলেন, অনেকেই আমার মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়েছে। বিষয়টি বোঝার ভুল থাকায় স্থানীয়রা দ্রুত খবরটি ছড়িয়ে দেয়। তারা সাংবাদিকদেরও ভুল তথ্য দিয়েছে। অনেক পেপারেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে সাংবাদিকদের ভুল নেই। যা ভুল করেছে এলাকার কিছু মানুষ। আমার পরিবারও শুনেছিল আমাকে বাঘে নিয়ে গেছে। তাই তারা কান্নাকাটি ও মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করে। আমি সুস্থ ও ভালো আছি।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর