পরিবেশ দূষণ করায় শিল্প প্রতিষ্ঠান মার কোম্পানি লিমিটেডকে সিলগালা করে দিয়েছেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। পাশাপাশি তিনি কারখানার সব ধরনের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মার লিমিটেডের কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। কারখানাটি জেলার মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের শাহপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে সড়কের পাশে অবস্থিত।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বেলা উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। আদালতের নির্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য বুধবার (২১ এপ্রিল) কোম্পানিকে সিলগালা করা হয়েছে।

মার কোম্পানি লিমিটেডের অপরিশোধিত দূষিত বর্জ্য একটি পাহাড়ি ছড়ায় ছেড়ে দিলে পানি পান করে মারা যাচ্ছে গবাদি পশু পাখি ও নানা প্রাণী। দূষিত বর্জ্য বিভিন্ন খালে যাওয়ার পর কৃষি জমি, মৎস্য, নদ নদীর পানি ও মানুষের জীবন জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নেতৃবৃন্দ জানায়, এ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের এক্তিয়ারপুর গ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছে। তারা মানববন্ধন, বিভিন্নস্থানে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। কিন্তু কোম্পানি এগুলো কর্ণপাত না করে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম।

এ বিষয়ে এক্তিয়ারপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্ব পানি দিবসে পাহাড়ি ছড়ার বর্জ্যের দূষিত পানি পান করে মারা গেছে এক্তিয়ারপুর গ্রামের কৃষক রেনু মিয়ার একটি গবাদি পশু। এ পশুটি মৃত্যুর জন্য মার কোম্পানি লিমিটেডকে অভিযুক্ত করে ইউএনওর কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, অপরিকল্পিত শিল্প দেশের উন্নয়ন নয়, বরং ধ্বংস ডেকে আনে। হবিগঞ্জ অঞ্চল তার উদাহরণ। শুরু থেকেই কোম্পানিটির উৎসে বর্জ্য শোধানাগার করে পরিকল্পিতভাবে পরিশোধন করার কথা বলে এলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। এ কারণে ২০১৫ সালে ৩০ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক বৈঠকে মার কোম্পানির উৎসে বর্জ্য পরিশোধানাগারের ব্যবস্থা না থাকায় কোম্পানিটিকে বন্ধ ঘোষণা করেন।

কোম্পানির উৎসে বর্জ্য শতভাগ পরিশোধন হয়ে বাইরে নিক্ষেপ হচ্ছে কীনা জানতে চাইলে কোম্পানির ইটিপি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহাউদ্দিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আসছিলেন কিছুদিন আগে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন বর্জ্য শতভাগ পরিশোধন হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগের অ্যাডভোকেট শাহ সাহিদা বলেন, সোমবার চেম্বার জজে কোম্পানির দায়ের করা আপিলের শুনানি ছিল। কিন্তু ওই শুনানি না হয়ে আগামী ২৬ এপ্রিল পরিবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে পূর্বের আদেশ বহাল থাকায় প্রশাসনের উদ্যোগে কোম্পানিটি সিলগালা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মার কোম্পানি লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি মূলত ড্রাই স্টার্চ পাউডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কারখানার কার্যক্রমের ফলে প্রচুর পরিমাণে তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি নাম মাত্র ইটিপি থাকলেও তা ব্যবহার না করে দূষিত বর্জ্য পার্শ্ববর্তী খালে ছেড়ে দেওয়ায় পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে।

এমএএস