ভোলার চরফ্যাশনে হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলা দুই মরদেহের পরিচয় মিলেছে। একই সঙ্গে হত্যায় অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে চরফ্যাশন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মিয়া ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে আর কে কে জড়িত ছিল তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে হত্যায় ব্যবহৃত ছেনি (বড় আকৃতির দা) খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ।

পুলিশ জানায়, জমি বিক্রির টাকা নিতে আসলে চরফ্যাশন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত উপেন্দ্র সরকারের ছেলে অমিত সরকার (৫৫) ও দুলাল সরকারকে (৪০) শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তাদের মরদেহ পুড়িয়ে ছেনি দিয়ে মাথা কেটে দূরবর্তী মহিবুল্লাহর বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে রাখে ঘাতকরা।

ঘটনার ১৪ দিন পর বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আসলামপুর ইউনিয়নের আসলামপুর গ্রামের ফরাজী বাড়ির মহিবুল্লাহর বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে কাটা মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময়ে ওই বাড়ির সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী মো. বেল্লাল, বেল্লালের শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম ওরফে আবু মাঝি ও ভাই কাশেম হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। 

ওসি মনির হোসেন মিয়া জানান, বেল্লালের দেওয়া তথ্য এবং তার দেখানো স্থান সুন্দরী খাল থেকে গলা কাটায় ব্যবহৃত ছেনি উদ্ধার করা হয়।

ঘাতকদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আসলামপুর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড পাশাপাশি। একটি রাস্তার এপাড় ওপাড়। তিন বছর আগে পৌরসভার বাসিন্দা মৃত উপেন্দ্র সরকারের ছেলে অমিত সরকার ও দুলাল সরকার তাদের ৫৬ শতাংশ জমি বিক্রির জন্য আসলামপুরের বাসিন্দা বেল্লাল ও তার শ্বশুর সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে বায়না চুক্তি করেন। ২০ লাখ টাকার জমি বায়না হওয়ার সময়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেন বেল্লাল ও সিরাজুল। সেই টাকা নিয়ে হঠাৎ একরাতে ভারত চলে যান অমিত সরকার ও দুলাল সরকারের পরিবার। 

নিহত দুলাল ও অমিত

এদিকে দলিল না পাওয়ায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বেল্লাল ও সিরাজুল। এ সময় দেশে এসে জমির দলিল করে দিয়ে বাকি ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন তারা। আশ্বাস অনুসারে ২০১৯ সালে ভারত থেকে চরফ্যাশনে আসেন অমিত সরকার ও দুলাল সরকার। কিন্তু সিরাজুল ও বেল্লালের কাছ থেকে পুরো টাকা না পাওয়ায় সাব কবলা দলিলও বুঝিয়ে দিচ্ছিল না তারা। 

সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় মোবাইলে বেল্লাল জানান- রাতে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বেল্লাল ও তার শ্বশুর সিরাজুল ইসলামের কথা মতো আসলামপুর ইউনিয়নের সুন্দরী ব্রিজের অদূরে জামাল ভুঁইয়ার পরিত্যক্ত নির্জন বাগানে ডেকে নিয়ে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় অমিত ও দুলাল সরকারকে। এরপরে ছেনি দিয়ে মাথা কেটে নিয়ে মহিবুল্লাহ ফরাজীর বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে অমিত ও দুলালের কাটা মাথা ফেলে রাখেন। হত্যাকাণ্ডের পুরো পরিকল্পনা করেন বেল্লাল। হত্যার পর সুন্দরী খালে গলা কাটায় ব্যবহৃত ছেনি ফেলে দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল দুপুরে আসলামপুরের সুন্দরী ব্রিজ সংলগ্ন জামাল ভুঁইয়ার বাগানে কৃষক আজাদ ছাগল চড়াতে গিয়ে পোড়া মরদেহ দেখে থানায় জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পোড়া কঙ্কাল উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পরে মরদেহ দুটি বেওয়ারিশ হিসেবে ভোলায় দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার ১৪ দিন পর কাটা মাথা উদ্ধার ও ১৫ দিনের ব্যবধানে পুরো রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় চর‌্যফাশন থানা পুলিশ।

ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার জানান, পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অল্প সময়ে এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। আইন অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর