বাজারে মাইকিং করছেন ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা

আড়তদারদের ওজনে কারচুপির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে প্রশংসায় ভাসছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আম্বিয়া সুলতানা। তিনি উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে ওজনে কারচুপি বন্ধ করেছেন। এতে কৃষকরা আড়তদারদের দীর্ঘদিনের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। 

ইউএনও অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (২১ এপ্রিল) উপজেলার সমাধিনগর বাজারে মন প্রতি ৩ কেজি বেশি নেয়ায় ৩ জন আড়তদারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সোনাপুর বাজারে একই অপরাধের দায়ে ৪ জন আড়তদারকে ২২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ডিজিটাল ওজন পরিমাপক ব্যবহার না করায় ৯টি ওজন পরিমাপক জব্দ করা হয়। 

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকালে নারুয়া বাজারে অভিযান পরিচালনা করে সঠিক ওজনে ক্রয়-বিক্রয় হওয়ায় আড়তদারদের অবগতির জন্য মাইকিং করা হয়। কৃষকদেরকেও সচেতন করা হয়। এছাড়া লকডাউনের সময় সরকারি বিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মাস্ক বিতরণ করা হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না আসতে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে আড়তদারদের ওজনে কারচুপির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা। অনেকেই যুগ যুগ ধরে চলা এই অনিয়মের অবসান ঘটানোয় ইউএনওকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। 

নারুয়া বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা নিজাম হোসেন, জালাল সেখ, হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, বালিয়াকান্দি কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায় এখানে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এসব পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। ৪০ কেজিতে এক মণ হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে প্রতি মণে অন্তত দুই থেকে তিন কেজি বেশি নেওয়া হয়। অর্থাৎ ৪৩ কেজিতে এক মণ ধরা হয়। কোনো কোনো হাটে ৪৫ কেজিতেও মণ ধরা হয়। 

দীর্ঘদিন এমন অনিয়মে এটা একটা রীতিতে পরিণত হয়েছিল। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর দীর্ঘদিন এমন কাণ্ডে আমরা এক ধরনের জিম্মি হয়ে গিয়েছিলাম। এটাকে নিয়ম হিসেবেই ধরে নিতাম। তবে সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা স্যার অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে কয়েকজন আড়তদারকে জরিমানা করেছেন। কৃষকদের কথা ভেবে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করায় তারা ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। 

সমাধিনগর গ্রামের জীবন বিশ্বাস বলেন, সিজনে প্রায় শত মণ পেঁয়াজ বিক্রি করি। মণ প্রতি ৩-৫ কেজি বেশি নেওয়া হয়। কোনো প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয়। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন অভিযানে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আমরা সচেতন হয়েছি। পরবর্তীতে কোনো আড়তদার এমন জিম্মি করতে চাইলে আমরা প্রশাসনকে জানাবো। আশা করছি অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রাখবে প্রশাসন।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আম্বিয়া সুলতানা বলেন, আমরা আসলে কারও প্রশংসা পাওয়ার জন্য কাজ করি না। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মচারী হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি সর্বদা নিয়ম মেনে পালন করার চেষ্টা করি। 

তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন হাটাবাজারে প্রতি মণে আড়াই থেকে তিন কেজি বেশি নেওয়া হয়। এটি একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। কোথাও কোথায়ও ৫ কেজি বেশি নেওয়ারও অভিযোগ ছিল। বিষয়টি জানার পর কয়েকটি বাজারে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আড়তদার এবং কৃষকদের বিষয়টি অবগত করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। শুধু ওজনে কারচুপিই নয় ভোক্তা অধিকার রক্ষায় প্রশাসন সজাগ রয়েছে। এক্ষেত্রে জনসাধারণকে তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করাসহ আরও সচেতন হতে হবে। 

ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা বলেন, শুক্রবার সকালে নারুয়া বাজারে আড়তদাররা পেঁয়াজ কেনা বন্ধ রেখেছিলেন। সকাল সোয়া ৭টায় গিয়ে কৃষক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলার পর তাদের মধ্যকার পারস্পারিক সন্দেহ দূর হয়। তারপর উভয়পক্ষ প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনাবেচা করে। প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক বাজার কমিটি কর্তৃক আগে থেকে মাইকিং করায় আজকের বাজারে শতভাগ ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। কৃষকের মুখের হাসি ছিল আজকের অভিযানের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

মীর সামসুজ্জামান/আরএআর