ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় মারধরের পর মাহফুজা আক্তার (৩৫) নামে এক গৃহবধূর শরীরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূ এ অভিযোগ করেন।  

পরিবারের লোকজন জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিংগিয়া গ্রামের পজির উদ্দিনের ছেলে সাদেকুল ইসলামের সঙ্গে সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের মধ্য ঝাড়গাঁও গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে মাহফুজা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই মাহফুজা আক্তারকে মারধর করতেন তার স্বামী সাদেকুল ইসলাম। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার এসব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেও দিয়েছেন। তারপরও থেমে নেই মাহফুজা আক্তারের ওপর তার স্বামীর নির্যাতন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। 

আহত গৃহবধূ মাহফুজা আক্তার বলেন, গত মঙ্গলবার আমি রোজা ছিলাম। বিকেলে বাড়িতে ফিরে কোনো কারণ ছাড়াই আমার স্বামী সাদেকুল ইসলাম আমাকে মারধর করে। যেহেতু রোজা ছিলাম তাই এর কোনো প্রতিবাদ করিনি। এর পরদিন বুধবার সকালে আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী। এতে আমার শরীরের পেছনের অংশ ঝলসে গেছে। পরে পরিবারের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আমাকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। 

মাহফুজার বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমার মেয়ের শরীরে জামাই আগুন দিয়েছে। এতে মেয়ের শরীরের পেছনের অংশ ঝলসে গেছে। সে বর্তমানে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা ভালো নয়, আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু জামাই সাদেকুল ইসলাম নিতে দিচ্ছে না। সে আমাদেরকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে- আমাদেরকে নাকি সে পুলিশে ধরিয়ে দেবে। 

তিনি বলেন, আমরা অসহায় ও গরিব হওয়ার কারণে প্রায়ই আমার মেয়ের ওপর এমন অত্যাচার নির্যাতন চালায় জামাই সাদেকুল ইসলাম। আমি এ ঘটনায় জামাইয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। 

অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমি আমার স্ত্রীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেইনি। সে ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজেই শরীরে আগুন দিয়েছে। এখন আমাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।

স্ত্রীকে মারপিট করার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই বাগবিতণ্ডা হতো। এগুলো বিষয়তো স্থানীয়ভাবে আপস হয়েছে। 

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রকিবুল আলম চয়ন বলেন, আগুনে গৃহবধূ মাহফুজা আক্তারের শরীরে পেছনের অংশের ১৫ শতাংশ ঝলসে গেছে। তাকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। 

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল হক প্রধান বলেন, স্ত্রীর শরীরে স্বামী আগুন দিয়েছে এ ধরনের কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

নাহিদ রেজা/আরএআর