‘লকডাউনে সবকিছু বন্ধ ছিল। তাই কেউ তেমন সাহায্য দেয়নি। ফলে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি। এখনো পাইনি কোনো ত্রাণ। আল্লাহর দিন কোনোভাবে চলে যাচ্ছে। একটি হুইলচেয়ার ছাড়া আমার আর কিছু নাই। একজনের বাড়িতে একটি কুঁড়েঘরে কোনোমতে থাকতেছি।’

কথাগুলো বলছিলেন ভিক্ষুক সাহেব আলী। তিনি একজন পঙ্গু মানুষ। দুই পায়ে চলতে পারেন না। তাই একটি ভাঙা হুইলচেয়ারে ভর করে চলেন। লকডাউনের কারণে সবাই যখন ঘরে, তখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাস্তায় নেমে আসতে হয় সাহেব আলীকে। আর দোকানপাট বন্ধ থাকায় রাস্তায়ও মিলছে না তেমন কোনো সাহায্য। তাই দিন শেষে খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকে।

সাহেব আলীর বাড়ি সদর উপজেলার খুমুরিয়া এলাকায়। তিনি ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে পিরোজপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে আসছেন। বর্তমানে মহামারির ফলে তিনি খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছেন।

সাহেব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তিন কূলে আমার কেউ নাই। অভাবের কারণে জীবন যেন আর চলে না। লকডাউনের কারণে কখনো কখনো শুধু পানি খেয়ে সময় পার করছি। সাহায্য-সহযোগিতা করার মতো কাউকে দেখিনি।

শুধু সাহেব আলী নন, তার মতো বিপদে পড়েছেন খুমুরিয়া এলাকর প্রতিবন্ধী ইউসুফ, বেকুটিয়া এলাকার আবদুর রহিমসহ অনেকে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষ রয়েছেন, যারা লকডাউনে দুবেলা খেতে পর্যন্ত পারেন না। এভাবে বিপদে পড়েছেন এ শহরে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ।

‘দুবেলা একটু খাবার আর একটু মাথা গোঁজার একটু জায়গা চাই’, প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষের দাবি এখন এমনটাই। অনেকেই আশ্রয়ণের ঘর পেলেও এসব অসহায় মানুষ পাননি প্রধানমন্ত্রী উপহারের সেসব ঘর।

জানা যায়, পিরোজপুর জেলায় প্রথম ধাপে ১ হাজার ১৭৫টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ২ হাজার ৪টি ঘর দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সদর উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮৫টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩০০টি ঘর দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপের ঘর সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের ৪০ শতাংশ ঘর দেওয়া হয়েছে। এরপরও অনেক অসহায়, দরিদ্র, অতিদরিদ্র ও ভিক্ষুকরা পাননি ঘর। ফলে তারা কোনোমতে কুঁড়েঘরে বসবাস করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে পরিবহনশ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিককে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে জেলায় ৫০ হাজার ৮৫০ জনকে ঈদ উপহার হিসেবে বিশেষ ভিজিএফ ৪৫০ টাকা করে দেওয়া হবে। এরপরও অসহায় ও দরিদ্র যারা রয়েছেন, তাদের খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।

আবির হোসেন/এনএ