মায়ের লাশ নিয়ে মেয়েদের কান্না, বাড়ি পৌঁছে দিল এক দল তরুণ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মা মিনারা বেগমের (৫৫) লাশের পাশে কাঁদছিলেন দুই মেয়ে। কারণ, মায়ের মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া ছিল না তাদের কাছে। ঘটনাটি গতকাল সোমবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার।
এমন অবস্থায় দালালদের একটি চক্র মরদেহ বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কথা বলে চাপ প্রয়োগ করছিল সদ্য মা হারানো দুই বোনকে। চাহিদা মতো টাকা জোগাড় করে না দিলে মরদেহটি হাসপাতাল থেকে বের করে নেয়ার হুমকিও দেয় দালালরা।
বিজ্ঞাপন
এমন সময় ঘটনাস্থল থেকে বিষয়টি জানতে পারেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'হেল্প প্লাস ময়মনসিংহ'র কয়েকজন সদস্য। পরে ঘটনাটি তারা সংগঠনের উপদেষ্টা আলী ইউসুফকে জানালে মরদেহ বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা হয়। পরবর্তীতে সংগঠনের সহ-সভাপতি অলক সরকারের নেতৃত্বে সদস্যরা মরদেহসহ অসহায় পরিবারটিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি পৌঁছে দেন।
মিনারা বেগম জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের গাবরবোয়ালি গ্রামের কৃষক নূর ইসলামের স্ত্রী।
জানা গেছে, মিনারা বেগম দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। চলতি সপ্তাহে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে মায়ের দেখভাল করতেন দুই বোন সুমি ও সুরাইয়া।
বিজ্ঞাপন
এদিকে সোমবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মিনারা বেগম। পরে তাদের কাছে গাড়ি ভাড়া না থাকায় মরদেহ নিয়ে বেকায়দায় পড়েন ওই দুই বোন। এসময় তাদের পাশে দাঁড়ায় 'হেল্প প্লাস ময়মনসিংহ' সংগঠনটি।
মিনারা বেগমের দেবর শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই ভাতিজি মোবাইলে ভাবির মৃত্যুর সংবাদ জানানোর পর বলে কিছু লোক মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে তাদের কাছে টাকা চাইছে। পরে আমি মোবাইলে তাদের সঙ্গে কথা বললে চার হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে মরদেহ শ্মশানে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দেয়। পরে কয়েকজন ছেলে ভাবির লাশসহ ভাতিজিদের অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
সংগঠনের উপদেষ্টা আলী ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মমেক হাসপাতালের ১২নং ওয়ার্ডে মারা যাওয়া ওই নারীর মরদেহ টাকার অভাবে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছিলেন না সঙ্গে থাকা দুই মেয়ে। পরে হেল্প প্লাস ময়মনসিংহের স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া দিয়ে সহায়তা করেন 'নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক' আনন্দ মোহন কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপক। পরে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে।
উবায়দুল হক/এমএএস