লকডাউনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় কিস্তি আদায় করছেন বিভিন্ন এনজিওকর্মীরা

লকডাউনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় কিস্তি আদায় করছেন বিভিন্ন এনজিওকর্মীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন ঋণগ্রহীতারা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। 

অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। তাদের ব্যবসা এখন মন্দা। কিস্তিতে ঋণ নিয়ে যারা ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার, ভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনেছেন তারা সীমিত আয় দিয়ে কিস্তি পরিশোধ করেন। অনেকের ঘরে খাবার না থাকলেও কিস্তি দিতে হয়। এ অবস্থায় কিস্তি আদায় বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ঋণগ্রহীতারা।

করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় দোকানপাট খুললেও গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে সরকার। চলাচল সীমিত করা হয়েছে। ফলে কর্ম হারিয়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে জোরপূর্বক কিস্তি আদায় করছে বিভিন্ন এনজিও।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ফার্মপাড়ার শের আলীর স্ত্রী জলি খাতুন মার্চ মাসে বেসরকারি এনজিও সংস্থা ব্র্যাক থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এড়াতে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এখন কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জলি খাতুনের স্বামী।

শের আলী বলেন, ব্র্যাকের জাফরপুর শাখা থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। পরের মাসেই  লকডাউন শুরু হয়ে গেল। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আমার দোকান আছে। ট্রেনের যাত্রী থাকলে দোকান চলে। এখন ট্রেন চলাচলা বন্ধ। তাই দোকানও বন্ধ। গত এক সপ্তাহে ব্র্যাকের কর্মীরা দুদিন বাড়িতে এসেছেন কিস্তির জন্য। আমার খারাপ পরিস্থিতির কথা জানালে তারা বাজে আচরণ করেন। পরে স্থানীয়রা এলে তারা চলে যান। লকডাউন দীর্ঘ হলে কীভাবে কিস্তি দেব আমি? এদের কথা শুনতে আর ভালো লাগে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের জাফরপুর শাখার ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, আমাদের কোনো কর্মী গ্রাহকের বাড়িতে কিস্তি আদায়ের জন্য যাননি। কিস্তি আদায় কিছুটা শিথিল করেছি আমরা। এ বিষয়ে পরিপত্র দিয়েছি। পরিপত্রে বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতার বাড়িতে গিয়ে কিস্তি আদায় করা যাবে না। ঋণগ্রহীতা নিজ ইচ্ছায় কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে চাইলে নেওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, যদি আমাদের কোনো কর্মী কিস্তি আদায়ে বাড়িতে গিয়ে থাকেন; তাইলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। খোঁজ নিয়ে আমরা তাদের নিষেধ করব। 

এদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এনজিওকর্মীরা ঋণগ্রহীতার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তি নিচ্ছেন। কোনো কোনো এনজিওকর্মী এক বাড়িতে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে সবার কাছ থেকে কিস্তি আদায় করছেন। এ সময় ঋণগ্রহীতা ও এনজিওকর্মীর মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। ছিল না সামাজিক দূরত্ব।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে গাড়ি চালাতে পারছি না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধার করে সংসার চালাচ্ছি, কিস্তির টাকা দেব কীভাবে? কিস্তি আদায় করা বন্ধ রাখা উচিত।

চুয়াডাঙ্গার এনজিও সংস্থা জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশনের শাখা ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, অফিসিয়ালি নির্দেশনা রয়েছে গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে কিস্তি আদায় করা যাবে না। গ্রাহকরা টাকা পরিশোধ করতে চাইলে আমাদের অফিসে এসে দিতে পারবেন। তবে আমাদের কোনো কর্মী কিস্তি আদায়ে গ্রাহকদের বাড়িতে যাননি।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিকুর রহমান বলেন, লকডাউনের মধ্যে কিস্তি আদায় বন্ধের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমরা পাইনি। তারা স্বাস্থবিধি মেনে কার্যক্রম চালাতে পারবেন। তবে মানবিক কারণে এ সময়ে কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে পারে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক (ডিসি) নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, দোকানপাট, শপিংমলসহ সবই খোলা। শুধু গণপরিবহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ। এছাড়া এনজিও প্রতিষ্ঠানের কিস্তি আদায় বন্ধের ব্যাপারে সরকারি কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে এমন পরিস্থিতিতে কিস্তি আদায় করতে গিয়ে কোনোভাবেই মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।

আফজালুল হক/এএম