চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া যাবে না অক্সিজেন

করোনায় পাশের দেশ ভারতের চিত্র দিনদিন ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করছে। অক্সিজেনের জন্য সৃষ্টি হয়েছে হাহাকার। টাকা দিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত অক্সিজেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অক্সিজেন। এ নিয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ ছড়ালেও অক্সিজেনের অপচয় রোধে সচেতন নন রোগীরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রয়োজন না থাকলেও অনেক রোগী বা তাদের স্বজনরা এটি ব্যবহারের জন্য চাপ দেন। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই হাসপাতালের বেডের পাশে থাকা সেন্ট্রাল অক্সিজেন থেকে নিজেরাই নিচ্ছেন অক্সিজেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল রেসিডেন্ট মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রামিম ইসলাম ইবনে নূর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অক্সিজেন আমাদের খুবই প্রয়োজনীয়। অনেক সময় আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হই। রোগীরা এভাবে আসে, যেন তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ সময় অনেকক্ষেত্রে তাদের স্বজনরা চাপ প্রয়োগ করেন অক্সিজেন দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা এটা বুঝে না যে সব রোগীর ক্ষেত্রে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাদের অক্সিজেন আসলেই প্রয়োজন শুধু তাদেরকেই দেওয়ার।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার ডা. উম্মে আতিয়া বলেন, নন-কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা ফেইস করতে হয়। অনেকের অক্সিজেন প্রয়োজন হলে আমরা দেওয়ার পর ওই রোগীর অবস্থার উন্নতি হলে তখন তার চেয়ে খারাপ আরেকজন রোগীকে তার অক্সিজেনটা দিতে চাই।

প্রয়োজনের বেশি অক্সিজেন নেওয়ায় বিপদে পড়তে পারেন রোগী

তিনি আরও বলেন, কিন্তু তখন আগের সেই রোগীর স্বজনরা অক্সিজেনটা দিতে চায় না। তারা মনে করেন, পরবর্তীতে হয়তো পাবে না। এই মনে করাটা যেন তারা না করেন, তাহলে আমাদের চিকিৎসা দেওয়াটা সুবিধা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনের বেশি অক্সিজেন নেওয়ায় বিপদে পড়তে পারেন রোগী। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকে অক্সিজেন গ্রহণের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, অতিমাত্রায় অক্সিজেন নেওয়ার ফলে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে চোখের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও বয়স্কদের ক্ষেত্রে কাশি, পেশির ব্যথা ও চোখের রেটিনার ডিএটাচম্যান্ট হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে এভাবে চলতে থাকলে একই সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বেশি হবে। আর রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাই অন্য পদক্ষেপের পাশাপাশি কমাতে হবে অক্সিজেনের অপচয়।

এদিকে, বিভাগের চার জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জামালপুরে চালু রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন। আর শেরপুর সদর হাসপাতালে স্থাপনের চার মাস পেরোলেও চালু হয়নি সেন্ট্রাল অক্সিজেন।

সে কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে ময়মনসিংহে। বিষয়টি মাথায় রেখে অক্সিজেনের অপচয় রোধে বাড়তি নজর দিয়েছেন মমেকের চিকিৎসকরা।

হাসপাতালটির কোভিড ফোকাল পারসন ডা. মহিউদ্দিন খান মুন বলেন, যেহেতু পার্শ্ববর্তী দেশে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের হাসপাতালে যাতে সংকট দেখা না দেয় সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গাইডলাইন অনুযায়ী অক্সিজেন ‘স্যাচুরেইশন’র মাত্রা ৯৫ শতাংশ রাখার টার্গেট। 

তিনি আরও বলেন, অনেকে হয়তো মনে করেন ১০০ শতাংশই তার অক্সিজেন ‘স্যাচুরেইশন’ থাকতে হবে। এটা ঠিক না। সেক্ষেত্রে টার্গেট অনুযায়ী আমরা ৯৫ শতাংশ রাখতে যতটুকু অক্সিজেন প্রয়োজন, আমরা ঠিক ততটুকুই দিচ্ছি।

ডা. মহিউদ্দিন খান মুন বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেসব রোগীর স্বল্পমাত্রার অক্সিজেন প্রয়োজন তাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন না দিয়ে সিলিন্ডার ব্যবহার করছি। তাতে করে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ওপর চাপ কমছে। এছাড়াও যেসব রোগীর অক্সিজেন কম প্রয়োজন সেক্ষেত্রে আমরা অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর ব্যবহার করছি।

এমএসআর