করোনার বিরূপ প্রভাবে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রফতানি ধীরগতি হওয়ায় রাজস্ব আয় কমেছে। মার্চ মাসের চেয়ে এপ্রিল মাসে ১৩০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনায় ব্যাংকিং সময় কমসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় রাজস্ব আয় ও বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

জানা গেছে, দেশের শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ও সরবরাহ সচল রাখতে সরকার বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম লকডাউনের আওতামুক্ত রেখেছে। ফলে এ পথে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য সচল রয়েছে। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আসে ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রায় দেড় বছর ধরে করোনার থাবায় দিন দিন রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়ছে বন্দরটিতে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, দেশে শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় সরকার বন্দরকে সচল রেখেছেন। এটা ভালো দিক। তবে তার খুব একটা সুফল ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না। 

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমদানি ও রফতানি পণ্য খালাসের আগে সরকারের রাজস্ব পরিশোধের জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকায় ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক লেনদেন ও কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারছেন না। ফলে বাণিজ্যে ধীরগতি নেমে আসায় সরকারের রাজস্ব আয় কমছে। সরকারের কাছে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো খোলা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, বাংলাদেশে করোনার টাল মাতাল অবস্থা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আরো ভয়াবহ। এমন অবস্থায় প্রায় দেড় বছর ধরে বাণিজ্যে মন্দা ভাব চলছে। বিশেষ করে ঘন ঘন লকডাউনে ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক বাণিজ্য করতে না পারায় বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাসের আগ্রহ অনেকটা কমেছে। এ ছাড়া ভারতে করোনা পরিস্থিতি মহামারি অবস্থা হওয়ায় সেখান থেকেও নানা সংকটে সময়মতো পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন জানান, সর্বশেষ গত রোববার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩৭৪টি বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক ও ৪০টি ট্রাক চ্যাচিজ বন্দরে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ৬৭ ট্রাক। আগের তুলনায় বাণিজ্য কিছুটা কমেছে।

বেনাপোল সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আকতার ফারুক জানান, গত মার্চ মাসে বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানি- রফতানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিলে এসে আদায় হয় ৪৭০ কোটি টাকা। মার্চের চেয়ে এপ্রিলে রাজস্ব আয় কমেছে ১৩০ কোটি টাকা। 

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে কাস্টমস কর্তৃক রাজস্ব আদায় ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এ রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৯৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক রাজস্ব আায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এসপি