এসএসসি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাত শিক্ষার্থী
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ফরম পূরণ, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন এসব শিক্ষার্থী।
এবার দক্ষিণ দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৬৫ জন শিক্ষার্থীর এসএসসির ফরম পূরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ের। বাকি ৩০ শিক্ষার্থী অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
সাত শিক্ষার্থী হলেন সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের দেবনগর গ্রামের অরবিন্দ সরকারের ছেলে সবুজ সরকার, একই এলাকার প্রসাদ সরকারের মেয়ে মৌ সরকার, সিন্ধু সরকারের মেয়ে তিথী সরকার, নারায়ণপুর গ্রামের মো. আবদুল মালেকের ছেলে আবদুর রহমান, ভাটপাড়া গ্রামের শাহজাহানের ছেলে ইসরাফিল ইসলাম, আখড়াখোলা গ্রামের সিদ্দিক গাজীর ছেলে মামুন, দেবনগর গ্রামের আমজেদ হোসেনের ছেলে আল-মামুন।
বিজ্ঞাপন
এসএসসি পরীক্ষার্থী সবুজ সরকার ঢাকা পোস্টকে জানায়, আমরা জানতাম এবার কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া সরাসরি এসএসসি পরীক্ষা হবে। কিন্তু স্যার একদিন ফোন করে স্কুলে আসতে বলেন। আমরা গেলে পরীক্ষার খাতা আর কলম ধরিয়ে দিয়ে পরীক্ষা দিতে বলেন। এর আগেও আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানানো হয়নি। পরে একদিন আবারও কয়েকজনকে ফোন করে হেড স্যারের বাড়িতে ডেকে নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
সজুব অভিযোগ করে বলে, আমাদের বিদ্যালয় থেকে এবার ৬৫ জন শিক্ষার্থীর এসএসসির ফরম পূরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী আমাদের বিদ্যালয়ের। বাকিরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের। তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে শিক্ষকরা তাদের ফরম পূরণ করেছেন।
আরেক শিক্ষার্থী তিথী সরকার বলে, শুনেছি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ফোন করে স্কুলে ডেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে কিন্তু আমাদের কোনো পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি, ফোনও করা হয়নি। আমরা শ্রেণিশিক্ষকের কাছে ফরম পূরণের কথা জানতে চাইলে তিনি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আর প্রধান শিক্ষকের কাছে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন শ্রেণিশিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এভাবে আমাদের ঘোরানো হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, ওই শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা হচ্ছে না দুটি কারণে। প্রথমত, কয়েক দিন আগে তাদের একটি যাচাই-বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তারা খুবই কম নম্বর পাওয়ায় তাদের ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়নি।
দ্বিতীয়ত, আমরা যদি শতভাগ পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে পাঠাই, তাহলে সেখান থেকে যদি ৭৫ শতাংশের কম পরীক্ষার্থী পাস করে, তাহলে আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি স্কুলের এমপিও বাতিল হয়ে যেতে পারে। এ জন্য তাদের ফরম পূরণ করা হবে না।
এ বিষয়ে দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর পরে আমাদের বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত হয়েছে। এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী চারটি শর্ত সাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করা হয়। পাশের হার সরকারি নীতিমালার নিচে এলে আমাদের এমপিও বাতিল হতে পারে। এই আশঙ্কায় দুর্বল শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রধান শিক্ষক বলেন, তারা প্রথম থেকেই বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। অবৈধ সুযোগ-সুবিধার কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ, শিক্ষার্থীরা অনলাইনে তাদের পরীক্ষার ফি জমা দিয়ে ফরম পূরণ করছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শেখ শফি আহমেদ বলেন, আমি তো এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানি না। না জেনে তো এখন কিছু বলতে পারব না। অভিযোগ পেলে শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে বিষয়টি দেখব।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে জানান, তাদের ফরম পূরণ না করে তা আটকে রাখার কোনো এখতিয়ার শিক্ষকদের নেই। লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেব।
আকরামুল ইসলাম/এনএ