সাতক্ষীরায় ভারতফেরত যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ
সাতক্ষীরার আল কাশেম হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে ভারতফেরত যাত্রীরা
পবিত্র ঈদুল ফিতরে পরিবারের কাছে ফিরতে পারছেন না সাতক্ষীরায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৩৩৭ জন ভারতফেরত যাত্রী। এখন শুধু কাঁদছেন তারা। কোয়ারেন্টাইনে থাকা এসব যাত্রীর অভিযোগ, তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। তবে প্রশাসন বলছে, সরকারি নির্দেশনা মেনেই কাজ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার হালিশহর গ্রামের নারগিস আক্তার। তিনি স্বামী মো. হুসামউদ্দীন ও নিকট আত্মীয় জাকিরুল্লাহকে নিয়ে ভারত থেকে ফিরে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন সাতক্ষীরায়। গত ৫ মে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করলে তাদের কোয়ারেন্টাইন রাখে প্রশাসন।
বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরা শহরের আল কাশেম হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন নারগিস আক্তার। প্রশাসনের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের অভিযোগ তুলে কান্নাকাটি করছেন তিনি।
নারগিস আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হোটেলে পানির লাইন ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পানির লাইন চালু করতে হচ্ছে। টয়লেটে পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমাদের কাছে জনপ্রতি হোটেলে থাকার জন্য প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। আমাদের কাছে টাকা নেই। এই টাকা কোথায় পাবো। আমাদের তিনজনকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন শেষে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমরা এই হোটেলে ৪৭ জন রয়েছি। কারও কাছে টাকা নেই। সবাইকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমাদের সহযোগিতা করার মতো সাতক্ষীরায় কী কোনো মানুষ নেই? ডিসি সাহেবকে বলেছি, এডিসি সাহেবকে বলেছি তারা কেউ কোনো কথা রাখছেন না। হোটেল মালিকরা আমাদের চাপ দিচ্ছেন। আমরা কী করবো? এখানে যে নির্যাতন সহ্য করছি ঈদের কোনো আনন্দ নেই। পরিবারের কাছে ফিরতে পারবো না। ঘরের মধ্যে আটক অবস্থায় ঈদ পালন করতে হবে। এর থেকে কষ্টের আর কী হতে পারে।
সাতক্ষীরা শহরের সাতটি আবাসিক হোটেলে ২৩৭ জন ও কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফে ১০০ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তারা গত ৫ মে থেকে বিভিন্ন সময় ভারত থেকে ফিরেছেন। প্রত্যেককে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ করেই ফিরতে হবে বাড়িতে। তারা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে অধিকাংশই চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন।
একই হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার সমিতিরহাট ইউনিয়নের উত্তর নিশিন্তাপুর গ্রামের বাসিন্দা রশিদ আহম্মেদ, আব্দুল মালেক ও জাবেদুল ইসলাম। সম্পর্কে তারা আপন তিন ভাই।
রশিদ আহম্মেদ বলেন, আমাদের বাবা ৮ মে মারা গেছেন। চোখের শেষ দেখাটুকু দেখতেও পারিনি। মেঝো ভাই আব্দুল মালেকের চিকিৎসার জন্য তিন ভাই একসঙ্গে ভারতে গিয়েছিলাম। কান্নাকাটি ছাড়া কোনো উপায় নেই। কী করবো? তারপর টাকা চাইছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. তানজিল্লুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, ঈদ উপলক্ষে কোয়ারেন্টাইনে থাকা এসব মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা যে অভিযোগ করছেন সেগুলো সঠিক নয়। ভারত থেকে নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইনে থাকার শর্তেই তারা বাংলাদেশে ফিরেছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ তো টাকা চাইবেই। ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন শেষ করে হোটেল বিল পরিশোধ করেই তারা বাড়িতে ফিরবেন।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর