ঈদ আনন্দ সবার সঙ্গে উপভোগ করতে হয়। না হয় যেন সব আনন্দই হয়ে যায় ফিকে। ছোটদের যেমন নতুন পোশাকে ঈদ আনন্দ জমে ওঠে। ঠিক তেমনি যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে চায়, তাদের আনন্দটা যেন এখানেই। এজন্যই ছুটি পেয়ে যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন নাড়ির টানে। বাড়ি যেতে পাড়ি দিতে মেঘনা নদী। তাতে টাকা বেশি যাবে? যাক। ফেরি না পেলে ট্রলারে যাবেন। তবুও যেভাবেই হোক নদী পার হয়ে বাড়ি ফিরতেই হবে। এভাবেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা বললেন কয়েকজন যাত্রী।

লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাটে বুধবার (১২ মে) রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারা এসব কথা বলেন। তারা বলছেন, কষ্ট করে চট্টগ্রাম থেকে আসতে যেহেতু পেরেছি। মেঘনা পার হয়ে বাড়িও যেতে পারব।

সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌপথটি চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ২১ জেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিতে এ রুটে যাত্রীদের চলাচল বেড়ে যায়। ঘাটগুলোতে যাত্রীদের ভিড় লেগে থাকে। লঞ্চ চলাকালীন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মেঘনা নদী পাড়ি দিতে হয়। করোনা সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ চলাকালে লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ ছিল ফেরিতে যাত্রী পারাপারও। সে সুযোগে মজু চৌধুরীর হাট ও ভোলার ঘাট এলাকার একটি সিন্ডিকেট জনপ্রতি হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে যাত্রী পারাপার করছে। এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি আবার ঘাট ইজারাদারও।

এদিকে যাত্রীদের জন্য লঞ্চ বন্ধ থাকলেও ফেরি চালু রয়েছে। এতে এ রুটে চলাচলকারী ফেরি কলমিলতা, কৃষাণী, কনকচাপা ছাড়াও ঈদ উপলক্ষে ফেরি কুসুমকলি যুক্ত করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ফেরিগুলো নদী পার হচ্ছে। প্রচণ্ড ঝুঁকি থাকলেও নাড়ির টানে ও পরিবারের পরিজনদের সঙ্গে ঈদ উপভোগ করতে বাড়ি যাচ্ছেন কর্মজীবী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন। সবশেষ রাত আড়াইটায় মজু চৌধুরীর হাট ফেরিঘাটে চারটি ফেরিই অবস্থান করছিল। এর মধ্যে ফেরি কলমিলতা ও ফেরি কুসুমকলি বিপুল যাত্রীতে ঠাসা ছিল। দুই একটি গাড়ি থাকলেও যাত্রীদের ভিড়ে তা চোখে পড়ে না।

অন্যদিকে নদীর মাঝপথে গেলে ভোলার ইজারাদাররা ফেরিতে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া উত্তোলন করেন। সরকারি নির্ধারিত মূল্য ৬৫ টাকা হলেও গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়ার পরও জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করছেন। মাঝ নদীতে ভাড়া নিয়ে কিছুই বলার সুযোগ থাকে না যাত্রীদের।

সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে আসা কয়েকজন যাত্রী জানান, গত ৪-৫ মাস তারা বাড়ি যেতে পারেননি। ঈদটি অন্তত পরিবারের সদস্যের সঙ্গে উপভোগ করতে চান। তাই ভাড়া যতই হোক, বাড়ি যাবেন। যেভাবেই সম্ভব সেভাবেই নদী পার হয়ে স্বজনদের কাছে পৌঁছাতে চান। কারণ ‘ঈদটা সবার সঙ্গে উপভোগ করতে হবে।’

মজু চৌধুরীর হাট ফেরিঘাট ইজারাদারের প্রতিনিধি সবুজ হোসেন ফিরোজ বলেন, কোনো গাড়ি নেওয়া হচ্ছে না। সেহরির পর ভোলার উদ্দেশ্যে ফেরি কলমিলতা ও কুসুমকলি ছেড়ে যাবে। দুটি ফেরিতেই যাত্রীরা গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। এ সুযোগে যাত্রীদের থেকে ভোলার ইজারাদারের লোকজন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অধিক ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন।

চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল বলেন, অবৈধভাবে কোনো যাত্রী পারাপারে আমি কিংবা আমার লোকজন জড়িত নয়। এটি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে উপস্থিত থেকে কয়েকজনকে আটক করেছি। তাদের জরিমানা ও নৌকা জব্দ করেছে ম্যাজিস্ট্রেট।

মজু চৌধুরীর হাট ফেরিঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম রাজু বলেন, যাত্রীর চাপ বেশি। এজন্য গাড়ির চেয়ে যাত্রীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। একটি ফেরিতে প্রায় ২ হাজার যাত্রী বহন করা যায়। যাত্রীপ্রতি সরকারি নির্ধারিত ভাড়া ৬৫ টাকা। যাত্রী পারাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এজন্য যাত্রীদের যাতায়াতে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এসএসএইচ