নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর তীরে অবস্থিত রাবেয়া পল্লীতে দেড় শতাধিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৪ মে) দুপুরে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ প্রতিবন্ধীর মধ্যে উন্নতমানের খাবার বিতরণ করেন। 

রাবেয়া পল্লীর পরিচালক ওবায়দুল হক বাচ্চুর সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মহাদেবপুর থানার এসআই এএসএম রায়হান আলম সরদার, এসআই জাহাঙ্গীর আলম, এসআই সামসুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে অসহায় প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে কিছুটা ভালো সময় কাটিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। মহাদেবপুর থানার পুলিশ সদস্যরা নিজেদের অর্থে সমাজের অসহায় জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য ঈদ আনন্দের আয়োজন করেন। তাদের উন্নয়নে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। 

রাবেয়া পল্লীর পরিচালক ওবায়দুল হক বাচ্চু জানান, ১৯৯৭ সালে তিনি বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তোলেন। সেটি জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ২০০০ সালে নিবন্ধন পায়। সেই সুবাদে তিনি জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বুঝতে পারেন যে, প্রতিবন্ধীরা সমাজে অসহায়, অবহেলিত, অনগ্রসর, সুবিধাবঞ্চিত, আদর ভালোবাসাহীন মানুষ। এই শিশুদের শিক্ষার মূল ধারায় আনার জন্য ২০১১ সালে তিনি মহাদেবপুর অটিস্টিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন করেন। নওগাঁ জেলায় এটিই প্রথম প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিস্টিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন। সেই আলোকেই এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে দুটো ভাগ রয়েছে। একটি এনডিডি ও অপরটি নন এনডিডি। তাদের এই বিদ্যালয়টি এনডিডি। অর্থাৎ নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার। চার ক্যাটাগরির প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে এই বিদ্যালয়। অটিজম, কাউন্ট সিন্ডোম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও সেরিরাল পারসি। এখানে ১৪২ জন প্রতিবন্ধী রয়েছে। ১৭ জন শিক্ষক তাদেরকে পাঠদান করে থাকেন। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার মূল ধারায় আনার জন্য এখানে প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধীরা যেন সমাজের বোঝা না হয় সেজন্য তাদেরকে মিষ্টির ঠোঙা তৈরি, সেলাইয়ের কাজ শেখানো প্রভৃতির মাধ্যমে সম্মানজনক জীবিকার সঙ্গে তাদেরকে সম্পৃক্ত করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় ও তাদের অনুরূপ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

ওবায়দুল হক বাচ্চু বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকার। স্থানীয় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তার বিদ্যালয়ের ৪৬ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পায়। 

তিনি বলেন, এই প্রতিবন্ধীরা আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই স্বজন। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তারা এই স্কুলে আসে। তাদের আনা নেওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল হক বাচ্চু।

শামীনূর রহমান/আরএআর