করোনার কারণে এবার আগে থেকেই হাটে এসে আম কেনায় ভোক্তাদের নিরুৎসাহিত করছে রাজশাহীর জেলা প্রশাসন। উৎসাহ দেয়া হচ্ছে অনলাইন কেনাবেচায়। কী অনলাইন, কী অফলাইন রাজশাহী থেকে কেনা আম ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয় কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।  

কিন্তু ভোক্তার ঠিকানায় পরিমাণে কম আম পৌঁছানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে মৌসুমের শুরুতেই সর্তক রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পরিবহনের ক্ষেত্রে অর্ডার নেয়ার পর প্যাকেট থেকে আম চুরি বা অন্য কোনোভাবে আম খোয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিসকে এর দায়ভার নিতে হবে। শুধু তাই নয়, দিতে হবে ক্ষতিপূরণও।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পুঠিয়ার বানেশ্বর আম বাজারে আম কেনা বেচায় উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এগারো দফা নির্দেশনা জারি করে হয়েছে। এর মধ্যে কুরিয়ারে আম পরিবহন সংক্রান্ত ওই নির্দেশনাটিও রয়েছে। 

এছাড়া কোনো লেনদেন বা মালামাল সরবরাহের কাজে মেট্রিক পদ্ধতির অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি ওজন বা পরিমাপ বা, ক্ষেত্রমত, সংখ্যামানের মানদণ্ড ব্যতীত, অন্য কোনো ওজন বা পরিমাপ বা সংখ্যামান ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মেট্রিক পদ্ধতিতে ৪০ কেজিতে এক মণ হয়। মণে কেনাবেচা হলে ৪০ কেজির বেশি দাবি করা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। যদি ৪০ কেজির বেশি কেনাবেচা করতে হয়, সেক্ষেত্রে, কেজিতে ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য বলা হয়েছে। কেজিতে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে। 

আম বাজারে শোলা প্রথা বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া নির্ধারিত খাজনার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে হাটের নির্ধারিত স্থানে কেনাবেচা করতে হবে।

বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা, সার্বিক সহযোগিতা ও সুষ্ঠুভাবে বাজার পরিচালনার স্বার্থে প্রত্যেক আম ব্যবসায়ীকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে। বিগত সময়ে দেখা গিয়েছে, অনেক আম ব্যবসায়ী হঠাৎ বাজারে এসে আম ক্রয় করে চাষিদের টাকা পরিশোধ না করে উধাও হয়ে গেছে। 

আমের গায়ে আমের মূল্য লিখতে পারবেন না। আমের মূল্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী তার নির্ধারিত প্যাডে বা স্লিপ বা কাগজে বা চিরকুটে লিখে স্বাক্ষর করতে হবে।

ব্যবসায়ীরা আমের গুণগত মান ও দর কষাকষি বাজারে শেষ করবেন। আড়তে গিয়ে নতুনভাবে দর কষাকষি ও চাষিকে হয়রানি করা যাবে না। 

ভ্যান বা ছোট গাড়িতে আম বানেশ্বর বাজারে আনা যাবে। কিন্ত ওই গাড়িগুলোতে মানুষ পরিবহন করা যাবে না। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো ধরনের ক্যামিকেল আমে ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া আম ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরিধান করাও বাধ্যতামূলক। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী (২০ মে) থেকে বাজারে নামবে গোপালভোগ আম। এর আরও পাঁচ দিন পর আগামী ২৫ মে থেকে নামবে লক্ষণভোগ, লখনা এবং রাণীপছন্দ। হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত আম নামবে আরও তিন দিন পর ২৮ মে থেকে। 

ল্যাংড়া নামবে আরও পরে আগামী ৬ জুন থেকে। ১৫ জুন থেকে নামবে আম্রপালি ও ফজলি আম। আর মৌসুমের শেষে ১০ জুলাই নামতে শুরু করবে আশ্বিনা ও বারি আম-৪। এ ছাড়া রঙিন আম খ্যাত বারি আম-১৪ নামবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে। এর আগে গত ১৫ মে নামানো শুরু হয় গুটি জাতের আম।

ফেরদৌস/এমএএস