পদ্মা নদীতে ভ্রমণতরি চালু

পদ্মা নদী ও চরাঞ্চলকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদীতে নামানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন চারটি নৌকা। দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে আরামদায়ক করতে এসব নৌকা নামানো হয়। এসব নৌকার নাম দেয়া হয়েছে ভ্রমণতরি।

সোমবার (০৪ জানুয়ারি) সকালে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব নৌকার উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মৌলবাদ প্রতিরোধে বিনোদন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার আয়োজন বাড়ানোর কথা বলেছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ।

পদ্মা সেতুর পর্যটকদের কেন্দ্র করে এসব নৌকা তৈরি করা হয়। লাল সবুজ রঙের নৌকাগুলো উদ্বোধনের পর এগুলোতে চড়ে চিফ হুইপসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তারা পদ্মা নদী ঘুরে দেখেন। জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান চিফ হুইপ।

নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, ঘাট এলাকায় কর্মরত লঞ্চ, স্পিডবোট ও হোটেল ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মরতদের পদ্মা সেতুর পর্যটনে সম্পৃক্ত করতে হবে। যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু ঘিরে পর্যটনখাতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শিবচরের চরাঞ্চলে ১২ একর জায়গায় প্রধানমন্ত্রী দুগ্ধ খামারের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু করেছেন। এতে একসঙ্গে কর্মসংস্থান ও পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

চিফ হুইপ বলেন, যেভাবে দেশে মৌলবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে- এসব রুখতে বিনোদন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিসর বাড়াতে হবে। নতুন প্রজন্মকে নেশামুক্ত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ই ইসলামের জন্য বেশি কাজ করছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার প্রমাণ দিয়েছেন। শুধু আশ্রয় দেননি; তিনি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করেছেন।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) রহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লা, পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাজাহান মোল্লা।

সভাপতির বক্তব্যে ডিসি রহিমা খাতুন বলেন, শিবচরের চরাঞ্চলের জেলেদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও পর্যটনের বিকাশে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে জেলেদের বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। পদ্মা নদী ও চরাঞ্চলের সৌন্দর্য সহজেই উপভোগ করতে পারবেন ভ্রমণপ্রেমীরা। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে পদ্মাসেতু দেখতে পাবেন তারা। আশা করা যায় পর্যটকরা পদ্মা সেতু ও মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ভাস্কর্যসমৃদ্ধ শিবচরের সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হবেন।

রহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক, মাদারীপুর

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু সংলগ্ন শিবচরের কাঁঠালবাড়ি পদ্মা নদীতে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চারটি নৌকা নামানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২০টি নৌকা নামানো হবে।

এসব নৌকার মালিক স্থানীয় জেলেরা। যারা মাছ ধরার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য পদ্মা নদীর সৌন্দর্য দেখানোর সেবায় আগ্রহী। ১০-১৫ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা অনুযায়ী একেকটি নৌকা তৈরি করে নদীতে নামাবেন জেলেরা। 

নৌকাগুলো দেখতে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন। যাত্রীরা নৌকাভ্রমণে যাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তেমন উপযোগী করে নৌকা তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধবার জন্য জেলা প্রশাসন নৌকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেবেন। নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেটসহ ভ্রমণ এলাকাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

এএম