আইনি জটিলতা ও নানা আন্দোলন-সংগ্রামসহ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বরগুনার ভারানি খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়েছে। রোববার (২৩ মে) সকালে ভারানি খালের পশ্চিম পাশের ৬৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে বরগুনা জেলা প্রশাসন। এর আগে ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে এ খালের পূর্ব পাশের অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বরগুনা শহরের খাকদোন নদী থেকে পায়রা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালটি স্থানীয়ভাবে ভারানি খাল নামেই পরিচিত। বরগুনা জেলা শহরের প্রধান বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এই খালটির দুই পাশে দীর্ঘ বছর ধরে দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। এর ফলে খালটি সংকুচিত হয়ে নাব্যতা হারায়। অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যের কারণে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় নৌযান চলাচল।

২০১৫ সাল থেকে খালটির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে প্রশস্ততা ও নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করতে আন্দোলন শুরু করে বরগুনা প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

এরপর ২০১৮ সালে খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। মামলা দায়েরের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ভারানি খালের দুই পাশের দুই কিলোমিটার অবৈধ দখল উচ্ছেদের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর বরগুনা জেলা প্রশাসন খাল দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান শুরু করলে খালের পশ্চিম পাশের ৬৮টি স্থাপনা উচ্ছেদ না করার জন্য আপিল করা হয়।

পরে গত ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার এ আপিল খারিজ করে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ এ খাল দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বরগুনা জেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জহিরুল হাসান বাদশাহ বলেন, ভারানি খালটি একসময় খরস্রোতা ও ব্যস্ততাপূর্ণ একটি খাল ছিল। এই খাল দিয়ে পণ্য এবং যাত্রীবাহী নৌযানের গন্তব্য ছিল পঁচাকোড়ালিয়া, বগি, তালতলী, চালিতাতলীসহ বিভিন্ন এলাকায়। দখলদারদের কবলে পড়ে খালটি এখন একেবারে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ খালে এখন পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আজ স্বার্থক হয়েছে। খালটি দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের বরগুনা শাখার সভাপতি মুশফিক আরিফ বলেন, ভারানি খাল দখলমুক্ত করার জন্য আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা বিভিন্ন মানুষের দ্বারস্থ হয়েছি। সর্বশেষ আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। তাই আমরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। 

তিনি আরও বলেন, অবৈধ দখলদাররা একটি খাল মেরে ফেলেছিল। আজ থেকে সেই খাল প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে। এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি। বরগুনার দখল হওয়া সকল খাল একই পদ্ধতিতে দখলমুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, দখল হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ বছর ধরে এ খালের খনন কাজ বন্ধ ছিল। আমরা দ্রুত এ খালের খনন কাজ সম্পন্ন করব এবং এ জন্য সকল প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, আদালতের কারণে এতদিন এ খালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। যেহেতু এখন এ খালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। 

এই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার আর কোনো সুযোগ নেই। তাই যারা এই খাল দখলমুক্ত করার জন্য আন্দোলন করেছেন, বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তাদের আর শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন হলে ভারানি খালের কোনো পাশে আর কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না বলেও জানান তিনি।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এসপি