স্ট্রেচারে শুয়ে গ্রাম দেখছেন জোবেদা খাতুন

মায়ের প্রতি ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন চিকিৎসক সন্তান। শয্যাশায়ী মাকে তার ইচ্ছা পূরণ করতে স্ট্রেচারে করে পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। এমন দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন চিকিৎসক।

বলা হচ্ছে হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মুখলেছুর রহমানের কথা। সম্প্রতি তিনি তার মায়ের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

জানা যায়, মুখলেছুর রহমানের বাড়ি জেলার মাধবপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামে। তার বাবা মকসুদ আলী ছিলেন একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। ২০০১ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর মা জুবেদা খাতুনকে নিয়ে বাসবাস করে আসছেন তিনি। প্রায় ৮৮ বছর বয়সী জুবেদা খাতুন কয়েক মাস আগে পড়ে গিয়ে ব্যথা পান। এতে কোমরের হাড় ভেঙে যায়। এরপর থেকে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে জীবন যাপন করছেন। শয্যাশায়ী হলেও এলাকায় ঘুরতে ও তার স্বামীর কবর দেখতে তার চিকিৎসক ছেলেকে বলেন। মায়ের এমন আবদারে চিকিৎসক ছেলে খোঁজেন বিকল্প ব্যবস্থা।

মায়ের ইচ্ছা পূরণ করা প্রত্যেক ছেলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমার মা দীর্ঘদিন বিছানায় থাকতে থাকতে অনেকটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বাইরে যেতে ও বাবার কবর দেখতে মন ছটফট করছিল। তাই আমি মাকে নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছি। দীর্ঘদিন পর ঘরের বাইরে মুক্ত পরিবেশ দেখাতে পেরেছি মাকে, এতেই আমার আনন্দ।

মোহাম্মমদ মুখলেছুর রহমান, চিকিৎসক

অবশেষে শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে স্ট্রেটার ভাড়া করে তিনি তার মাকে এলাকা ঘুরিয়ে দেখান এবং তার বাবার কবর জিয়ারত করান। ছেলের এমন কীর্তি দেখে শয্যাশায়ী মাকেও উৎফুল্ল দেখা গেছে। ছেলের ভালোবাসার কীর্তি রোববার (৩ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রশংসায় ভাসেন ছেলে মুখলেছুর রহমান। পরে এ নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী জানান, আজকাল বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি ছেলেদের ভালোবাসা কমে যায়। চিকিৎসক ছেলের ভালোবাসা দেখে আমরা হতবাক হয়ে পড়ছি। মা-বাবার প্রতি ছেলেদের এ ধরনের ভালোবাসা থাকলে হয়তো কোনো বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না।

একই গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মিয়া জানান, মায়ের প্রতি চিকিৎসক ছেলে যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, আজকাল তা খুঁজে পাওযা যায় না। বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি ছেলেরা দায়িত্বশীল হলে সমাজে কোনো মা-বাবা অবহেলিত থাকবেন না। মুখলেছুর রহমানের ভালোবাসা ও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখে তরুণ প্রজন্মের অনেক শেখার আছে।

এ ব্যাপারে মোহাম্মমদ মুখলেছুর রহমান বলেন, মায়ের ইচ্ছা পূরণ করা প্রত্যেক ছেলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমার মা দীর্ঘদিন বিছানায় থাকতে থাকতে অনেকটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বাইরে যেতে ও বাবার কবর দেখতে মন ছটফট করছিল। তাই আমি মাকে নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছি। দীর্ঘদিন পর ঘরের বাইরে মুক্ত পরিবেশ দেখাতে পেরেছি মাকে, এতেই আমার আনন্দ।

তরুণ প্রজন্মের প্রতি মুখলেছুর রহমান বলেন, আমি মনে করি, প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে তাদের মা-বাবার প্রতি দায়িত্বশীল ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।

এনএ