আম্ফানের ক্ষত এখনো শুকায়নি খুলনার উপকূলীয় এলাকায়। এখনো সংস্কার করা হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো আবারও ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন তারা। 

গত বছরের ২০ মে আঘাত হানা আম্ফানে খুলনার কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হয়। জেলার ৯টি উপজেলায় সাড়ে ৮৩ হাজারের মতো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে শুধু কয়রা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার। সুন্দরবন সংলগ্ন এ উপজেলার ১৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এখন ঝুঁকিপূর্ণ।

কয়রা উপজেলা চারদিক থেকে নদীবেষ্টিত। শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ দুটি জনপদকে ঘিরে রেখেছে। দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়া বিরূপ হলে পানির চাপে কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। উপকূলীয় জনপদের বেশ কিছু জায়গা রূপ নেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতায়। মাঝে মধ্যে গ্রীষ্ম মৌসুমেও বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। 

সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখন নতুন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে চিন্তিত। তবে কয়রা উপজেলা প্রশাসন বলছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় তারা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কয়রার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম। এরই মধ্যে কয়রাবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে।

মৎস্যচাষি নাসির জানান, গত বছর আম্ফানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তার দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনো সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। এবার বাঁধ ভেঙে গেলে তাকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, বেড়িবাঁধ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক আছে। উপজেলার উত্তর বেদকাশি এলাকার গাতিরভেড়ি, মহারাজপুরের মঠবাড়ি, দশালিয়া, মহেশ্বরীপুরের নয়ানি এই চারটি বেড়িবাঁধ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারে কাজ চলছে। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। তবে কাজের গতি সন্তোষজনক নয়।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সিপিপি, রেডক্রিসেন্ট, ইউপি সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যারা সাগরে বা নদীতে রয়েছে তাদের ফিরে আসতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা পাওয়া মাত্র স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে কয়রার ২৫ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুই হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে বাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে (লিকেজ) পানি প্রবেশ করছে।

জোড়াতালির বেড়িবাঁধ, দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অভাব এখনো দৃশ্যমান। এর মধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এতে আতঙ্ক বেড়ে গেছে এসব এলাকার মানুষের। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকা।

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। 

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনার মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও ১১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি এড়াতে কাজ করছে রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপি, বেসরকারি এনজিওর স্বেচ্ছাসেবকরা।

মোহাম্মদ মিলন/এসপি/জেএস