পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে অসহায়, গরিব ও দুস্থ মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা সুকৌশলে আত্মসাৎ করেছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ১০ নম্বর শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রাণজিৎ কুমার রায় পলাশ।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, শৌলমারী ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা জিআর বরাদ্দ হিসেবে ৫০০ জন সুবিধাভোগীর প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এবং ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের জন্য ৬ হাজার ৭১৭ জন সুবিধাভোগীকে ৪৫০ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।

তবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য, রমজান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার (জিআর) এবং ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ উভয় তালিকায় নাম আছে, এমন সুবিধাভোগীর সংখ্যা দেড় শতাধিক। উভয় বরাদ্দ পাওয়া সুবিধাভোগীরা জিআর বরাদ্দে ৫০০ টাকা ও ভিজিএফ বরাদ্দে ৪৫০ টাকাসহ ৯৫০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তারা পেয়েছেন ভিজিএফ বরাদ্দের ৪৫০ টাকা। পবিত্র রমজান উপলক্ষে অসহায় ও গরিব মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০০ টাকারও হদিস নেই।

জিআর ও ভিজিএফ উভয় বরাদ্দে নাম থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০০ টাকা না পাওয়া বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগীর সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া য়ায়। তবে জিআর বরাদ্দ তালিকার সবাই ভিজিএফের ৪৫০ টাকা পাওয়ায় জিআর বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ হওয়ার ঘটনা টের পাননি কেউ। ফলে সুকৌশলে এ টাকা আত্মসাৎ করে ইউপি চেয়ারম্যান।

শৌলমারী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মুদিপাড়া এলাকায় থাকেন ফুলো বলা (৮০)। তার স্বামী জতীন্দ্র রায় মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। তিন ছেলে থাকলেও একটি চুলা আর একটি একচালার ঘরেই ফুলো বালার সংসার। জিআর বরাদ্দের তালিকায় তার নাম ২৮৮ নম্বর ক্রমিক এবং ভিজিএফ বরাদ্দের তালিকায় ৫৪৫৩ নম্বরে রয়েছে।

ফুলো বালা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঈদের দুই দিন আগে ৪৫০ টাকা পেয়েছি। আমি আর কোনো টাকা পাই নাই। কষ্ট করে দিন যাচ্ছে। আমার নামে বরাদ্দের ৫০০ টাকা আর দেবে না হয়তো।

একই এলাকার মোনা রাম। পেশায় কৃষিশ্রমিক। জিআর বরাদ্দে তার নাম রয়েছে ২৭৭ ক্রমিক নম্বরে আর ভিজিএফ বরাদ্দের তালিকায় ৫৬৭৯ নম্বর ক্রমিকে। মোনা রাম রায় জানান, ঈদের আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪৫০ টাকা পেয়েছি। আমি আমার নামে বরাদ্দ থাকা আরও ৫০০ টাকা চাই। আমরা তো টের পাইনি, আমাদের নামের টাকা গেল কোথায়?

শৌলমারী ইউনিয়নের আনছার হাট-সংলগ্ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এমআই পাড়া এলাকার বাসিন্দা মাহিনুর বেগম। তার স্বামী আবদুর রহিম পেশায় শ্রমিক। জিআর বরাদ্দের তালিকায় মাহিনুর বেগমের নাম আছে ২৩৮ নম্বর ক্রমিকে আর ভিজিএফ বরাদ্দের তালিকায় আছে ৫৪০৯ নম্বর ক্রমিকে।

মাহিনুর রহমান জানান, আমি তে কিছু জানি না, আমি ঈদের আগের দিন ৪৫০ টাকা পাইছি। কিন্তু ৫০০ টাকা তো পাই নাই।

একই কথা জানান ওই এলাকায় আবিয়া বেগমের মেয়ে ও জামাই। আবিয়া বেগমের নাম রয়েছে জিআর বরাদ্দের ২৪৬ নম্বর ক্রমিকে আর ভিজিএফের ৫৪১৭ নম্বর ক্রমিকে।

শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনেই দরজি হিসেবে কাজ করেন গোপাল চন্দ্র রায়। স্ত্রী ললিতা রানী পেশায় গৃহিণী। অন্যের এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে এবার ধান চাষ করেছেন। জিআর এবং ভিজিএফ উভয় তালিকায় ললীতা রানীর নাম থাকলেও টাকা পেয়েছেন ভিজিএফের ৪৫০ টাকা।

ললিতা রানী জানান, ঈদের দুই দিন আগে আমিও ৪৫০ টাকা পেয়েছি। আমার এলাকায় দু-একজন ৫০০ টাকাও পেয়েছে। আমি পাই নাই, জানিও না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান প্রাণজিৎ কুমার পলাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবাধনে ট্যাগ কর্মকর্তা, ইউপি সদস্যরা ও সচিবসহ সবার সহযোগিতায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে জিআর ও ভিজিএফ বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। জিআর বরাদ্দের টাকা না পাওয়ার মতো বিক্ষিপ্ত কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তা রিকভার করার মতো ক্ষমতা আমি চেয়ারম্যান রাখি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহাবুব হাসান মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাহমুদ আল হাসান রাফিন/এনএ