আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ, মাঠে থাকবেন ৯০০০ স্বেচ্ছাসেবক
পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জানানো হয় জেলায় ৭০২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলাজুড়ে ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন।
সোমবার (২৪ মে) বিকেল সাড়ে চারটায় জেলা প্রশাসকের দরবার হলে এই সভা হয়। জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় ৭০২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে খাদ্য, ডাক্তার ও স্কাউট এবং যুব রেড ক্রিসেন্ট ভলান্টিয়ার রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জেলায় জরুরি খাদ্যসহায়তা, শিশু ও গোখাদ্যের জন্য ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। জেলায় সিপিপি, স্কাউট, যুব রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার টিমসহ ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন।
এর আগে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় পটুয়াখালীতে ৮৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। যারা ঘূর্ণিঝড়ের সময় মাঠপর্যায়ে মানুষকে সেবা প্রদান করবেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান জানান, পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৩০০ পুলিশ সদস্য দুর্যোগের আগে ও পরে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সাইক্লোন শেল্টারে নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করবে। এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার।
বিজ্ঞাপন
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জরুরি প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হুমায়ন কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. তানিমা পারভিন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ বিকেল চারটা পর্যন্ত পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিমি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্ল্যাহ্ বলেন, সাগরে টানা ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে আগেই নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় আরও নতুন নতুন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ও ঘোষণার কাজ চলমান। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখতে বলা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রাখা হবে। জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। চর ও দ্বীপগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিপৎসংকেত দেখানোর জন্য সাংকেতিক পতাকা টাঙানো ব্যসস্থা করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সাইক্লোন শেল্টারগুলোয় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামাদি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আজ পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ পটুয়াখালী জেলায় (২) নম্বর সংকেত ঘোষণা করায় দুর্যোগ মোকাবিলার নিজেদের মধ্য যোগাযোগ ও প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে সিপিপি, রেড ক্রিসিন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার টিমের সদস্যরা।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এনএ