বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাঁধ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে উপকূলে জোয়ারের উচ্চতা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। ভরা পূর্ণিমায় জোয়ারের এ উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় পাঁচ থেকে সাত ফুট। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যখন উপকূলে আঘাত হানবে তখন থাকবে ভরা পূর্ণিমা।

তখন ঝড়ের প্রভাবে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তাই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ওই দিন উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৫ থেকে ১৮ ফুট উচ্চতার জোয়ার প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যা জলোচ্ছ্বাসের রূপ নিতে পারে। এতে স্বল্প উচ্চতার কারণে উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বাঁধ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে শঙ্কিত উপকূলের বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জেলায় ৮০৫ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরও নানা কারণে জেলার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে আরও জানা গেছে, জেলার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বাঁধের উচ্চতা ১৩ ফুটের একটু বেশি। অন্যদিকে পূর্ণিমার জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস মিলিয়ে ১৫ থেকে ১৮ ফুট উচ্চতায় নদ-নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে জেলার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুরি গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কর্তৃপক্ষের বাঁধ নির্মাণে টনক নড়ে। ঝড় থেমে গেলে তাদের আর খবর থাকে না। বর্ষা মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ কারণে বাঁধের স্থায়িত্ব থাকে না। শুকনো মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করা হলে বাঁধ আরও টেকসই হবে। আমরা শুকনো মৌসুমে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই।

পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর মাঝি বলেন, সিডরের সময় ভেঙে যাওয়া বাঁধ এখনও মেরামত করা হয়নি। এই এলাকার জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে হলে যুগোপযোগী বাঁধ নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই বাঁধের কারণে আমরা নিঃস্ব।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার মো. জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, জেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে চার-পাঁচ ফুট উচ্চতারও বেড়িবাঁধ আছে। এছাড়াও সিডর-আয়লায় যে সব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাও পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। এজন্য বরগুনার মানুষ জলোচ্ছ্বাসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাঁধের কারণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বরগুনায় যুগোপযোগীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা অত্যাবশ্যক। এটা এখন এ জেলার মানুষের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে। 

জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, বরগুনায় যে বাঁধ আছে তা পাকিস্তান আমলের। এরপর আর উল্লেখযোগ্যভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে বরগুনার সিংহভাগ বাঁধ পানির প্রবাহ প্রতিহত কারা জন্য মোটেই উপযোগী নয়।

বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার আলম বলেন, জেলায় ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এরমধ্যে নানা কারণে ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। তাই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যদি ১৫ থেকে ১৮ ফুট উচ্চতায় নদ-নদীর পানি প্রবাহিত হয়, তাহলে এই বাঁধ প্লাবিত হবে।

প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা বরগুনার প্রায় ১০০ মিলোমিটার বেড়িবাঁধ যুগোপযোগীভাবে নির্মাণ করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এ প্রস্তাব অনুমোদন পেলে অন্তত এই শঙ্কা কিছুটা কমে আসবে। 

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমএসআর