স্বেচ্ছাশ্রমে ৭০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেললেন হাতিয়াবাসী
নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ৪০ বছর ধরে মেঘনার গভীরে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে নিজস্ব অর্থায়নে কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে। রোববার (৩০ মে) সকালে স্বেচ্ছাশ্রমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৭০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজের উদ্বোধন করেন হাতিয়াবাসী।
করোনা মহামারির কারণে ছোট পরিসরে নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাতিয়া উপজেলা নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নদীভাঙন রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তিনি আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে আমাদের দুটি প্রকল্প অনুমোদন পাচ্ছে না। তাই আমরা হাতিয়ার মানুষ আমাদের মাতৃভূমি রক্ষার্থে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে ৭০০ মিটার জিও ব্যাগ ফেলানোর অর্থ সংগ্রহ করেছি। এই ৭০০ মিটার কাজ সমাপ্ত করতে পারলে আমরা নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাব।
তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে সরকার গত ২৬ এপ্রিল এক পরিপত্র জারি করে স্বাস্থ্য ও কৃষি-সংশ্লিষ্ট ছাড়া সব ধরনের উন্নয়নকাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের প্রচেষ্টায় হাতিয়ার নদীভাঙন রোধে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাতিয়া উপজেলা নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুহিন বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী, গ্রাম্য চিকিৎসক, প্রবাসী, পরিবহনমালিক, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকরা নদীতীর রক্ষার অর্থসহায়তা করেছেন। প্রথমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। হাতিয়ার নলচিরা ঘাটের পাশে প্রায় ৭০০ মিটার নদীর তীর এলাকায় এই জিও ব্যাগ দিয়ে নদীভাঙন রোধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, গাজীপুরের একটি কারখানা থেকে দুই ধাপে ২৪ হাজার জিও ব্যাগ আনা হয়েছে। বালুভর্তি ও ডাম্পিংয়ের জন্য রংপুরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ৫০ সদস্যের একটি শ্রমিক গ্রুপ এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জামিল আহম্মেদ পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড হাতিয়ার এই ভাঙন এলাকায় ২৯৭ মিটার জায়গায় পরীক্ষামূলক কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছে। তাতে দেখা যায়, এক বছরে ওই জায়গায় নদীর ভাঙন অনেকটা রোধ হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে সবচেয়ে ভালো দিক হলো পানির গভীরতা অনেকটা কমে গেছে। তাতে জিও ব্যাগ পেলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। আমরা একটি ডিজাইন ঠিক করে দিয়েছি। আমাদের একজন প্রতিনিধি সার্বক্ষণিক এই কাজের তদারক করছেন। আমাদের বাজেট না থাকায় আমরা কাজটি করতে পারছি না।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীভাঙন রোধে হাতিয়াবাসীর জন্য দুটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। একটি প্রকল্প হলো হাতির মূল ভূখণ্ডের চারপাশে ব্লক করা। অন্যটি হলো বয়ারচর, কেরিংচর ও নলেরচর প্রশাসনিক এলাকায় চারপাশে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা। অনুমোদন পেলে আশা করি হাতিয়ার নদীভাঙন কমে যাবে।
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীভাঙন হাতিয়াবাসীর সব থেকে বড় সমস্যা। আমি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪ লাখ ফুট বালু ও নগদ ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যা কিছুর প্রয়োজন, আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে পাশে দাঁড়াব।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর থেকে অব্যাহত নদীভাঙনে হাতিয়ার তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া বর্তমানে হাতিয়ার উত্তর পাশে সুখচর, নলচিরা ও চানন্দী ইউনিয়নের বৃহৎ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীভাযন এই দ্বীপের সবচেয় বড় সমস্যা।
হাসিব আল আমিন/এনএ