সন্তানদের খাবার জোগাতে না পেরে আত্মহত্যা করলেন ফ্রিল্যান্সার
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন রাজশাহী নগরীর শেখপাড়া এলাকার ফ্রিল্যান্সার আনোয়ারুল ইসলাম টুটুল (৩৫)। চিকিৎসা করাতে তার জমানো টাকা সব খরচ হয়ে যায়। ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন রাজধানী ঢাকার রেক্স আইটি ইনস্টিটিউিটে। হাজারো বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ডিজিটাল প্রতারণার দায়ে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবদুস সালাম পলাশকে গ্রেফতার করে।
বিজ্ঞাপন
হাজারো স্বপ্নবাজ ফ্রিল্যান্সারের মতই পথে বসেন টুটুল। তবুও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। খোলেন ‘সোনার বাংলা ড্রিম’ নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কিছুতেই সংকট কাটছিল না।
গত তিন মাস ধরে চরম অর্থকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তিন শিশু সন্তানের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দিতেও পারছিলেন না। স্ত্রী-সন্তানদের দিতে পারছিলেন না পরনের পোশাক। শেষে হাল ছেড়ে দেন আনোয়ারুল ইসলাম টুটুল। সোমবার (৩১ মে) দিবাগত রাতে নিজের স্বপ্নের আইটি সেন্টারে স্বপ্নের পরিসমাপ্তি ঘটান তিনি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১ জুন) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর শেখপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ফ্রিল্যান্সার টুটুলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, টুটুল রাত জেগে কাজ করতেন। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন প্রতিদিনের মত তিনি ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে বিলম্ব দেখে দরজায় কড়া নাড়েন। সাড়া না পেয়ে পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করে। সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন টুটুল।
এসআই গোলাম মোস্তফা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে টুটুল দীর্ঘ পোস্ট দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন- তিন মাস ধরে তিনি পরিবারের জন্য খাবার জোগান দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। কীভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই কথাও লিখেছেন তিনি। বেঁচে থেকে তিনি আর ঋণ বাড়াতে চান না- তাও উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মন জানান, পুলিশ পুরো ঘটনা তদন্ত করছে। এনিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর