তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং বৃষ্টির পানিতে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা। তিস্তার ভাঙনে গত দু’দিনে এ দুই উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন কাশিমবাজারে শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পুরাতন বজরা গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদটিসহ অনেক বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। মঙ্গলবার (১ জুন) রাত পর্যন্ত মসজিটির এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে যায়। বুধবার (২ জুন) সকালে তীব্র ভাঙনের মুখে অবশিষ্ট অংশ স্থানীয়রা সরিয়ে নিলে মসজিদটির ভিত্তি নদীগর্ভে বিলীন হয়।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে জানা যায়, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকার নদী তীরবর্তী অর্ধ-শতাধিক পরিবার ভাঙনের মুখে তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেন। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে পড়ে ওই এলাকার পশ্চিম বজরা দাখিল মাদরাসা, পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম বজরা এলাকার পুরাতন বজরা গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদ।
কয়েকদিনের অব্যাহত ভাঙনে গতকাল রাত পর্যন্ত পশ্চিম বজরা এলাকার পুরাতন বজরা গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদটির এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে যায়। পরে আজ সকালে অবশিষ্ট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আগে সরিয়ে নেন এলাকাবাসী। ভাঙনে বিলীন হয় মসজিদটির ভিত্তি। এছাড়াও পশ্চিম বজরা এলাকার প্রায় ২৫-৩০ বিঘা জমির বাদাম, তোশা পাট, মরিচ ক্ষেত, সবজি ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙনের কবলে ওই ইউনিয়নের চর বজরা এলাকার কাশিমবাজারগামী রাস্তাটির শেষ প্রান্ত ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কাশিমবাজার থেকে উলিপুরগামী সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় নদীর পানি খামার বজরা এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এর ফলে চর বজরা পূর্বপাড়া গ্রামের পুরো এলাকা ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কাশিমবাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল হক বলেন, হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের এলাকার অনেক সরকারি স্থাপনাসহ অসংখ্য ঘর-বাড়ি বিলীন হতে চলছে। এই মুহূর্তে যদি ভাঙন ঠেকানো না যায়, তাহলে সরকারি স্থাপনাসহ অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমি মনে করি স্থায়ীভাবে বাধ নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ১১ নং হরিপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী কাশিমবাজার হাট রয়েছে। সরকার প্রতি বছর এ হাট থেকে ১৫-১৬ লাখ টাকা রাজস্ব পায়। এছাড়া কাশিমবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাশিবাজার নাজিমাবাদ বিএল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার নাজিমাবাদ বিএল আলিম মাদরাসা ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত বছরও বন্যার সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নদী ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দু’দিন জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকাবে, পরে আর নাই। আমরা এ ভাঙন রোধ চাই না। স্থায়ী সমাধান চাই।
ইউনিয়নের শত শত বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। নদী তীরবর্তী অনেকেই বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। অনেকের শেষ সম্বলটুকুও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন। নদী ভাঙনে নিঃস্ব স্থানীয়রা এখন পর্যন্ত সরকারি কোনও ত্রাণ কিংবা সহযোগিতা পাননি। স্থানীয়রা বলেছেন, চেয়ারম্যান, এমপি ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাও ভাঙন দুর্গত মানুষের খোঁজ নেননি।
এ বিষয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারির সঙ্গে ফোনে যোগােযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, হরিপুর ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, স্থানীয়রা বলছেন, গত বছরও বন্যার সময় ভাঙন বৃদ্ধি পেলে পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর নদীশাসনের কাজ শুরু হবে বলে এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারি প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, আমি ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, দু-তিন দিনের মধ্যে তারা ভাঙন রোধে কাজ শুরু করবেন। ভাঙনের কবলে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক আমাকে দেয়া হলে আমি তা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব।
জুয়েল রানা/এসএস