বাঁধ পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবুকে জড়িয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংসদ সদস্য নিজেই।

বুধবার (২ জুন) বিকেলে কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। 

তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা হলো মঙ্গলবার (১ জুন) সকালে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ পরিদর্শন যাই। সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে কয়েক হাজার মানুষ কাজ করছিলেন। তারা আমার কাছে টেকসই বেড়িবাঁধের জোরালো দাবি তোলেন। আমি তাদের আশ্বস্ত করি দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ কাজ শুরু হবে। তখন আমি তাদের সঙ্গে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজে অংশ গ্রহণ করি। অথচ কয়েকটি গণমাধ্যম ঘটনার কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে প্রচার করলেও সম্পূর্ণ ঘটনা প্রকাশ করেনি।

তিনি বলেন, দলের নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ও দলের বিদ্রোহীদের উৎসাহদাতা কয়েকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এর আগেও আম্পান পরবর্তী বাঁধ নিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করছিলেন। এটা তারই ধারাবাহিকতা।

তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামির এক কেন্দ্রীয় নেতাকেও তারা কয়রায় এনে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। কয়রায় ১২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ একসঙ্গে সংস্কার করা সম্ভব নয়। এছাড়া বড় অঙ্কের একটি বরাদ্দ পাশ হলেও কাজ শুরু করতে আরও কয়েকমাস সময় লাগবে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আম্পান ও ইয়াস চলাকালীন সময় তিনি কয়রায় অবস্থান করছিলেন। খুলনার অনেক গণমাধ্যমকর্মীর কাছে তিনি ওই সময় দুর্যোগ প্রস্তুতি সম্পর্কে বক্তব্যও দিয়েছিলেন। 

সংসদ সদস্য আরও বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ কয়রায় অবশ্যই হবে, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু জামায়াত-বিএনপি ও দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রীমহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। একটি বিশেষ মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে আমার ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অপচেষ্টায় লিপ্ত।

তিনি বলেন, ষাটের দশকে নির্মিত বাঁধগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব বাঁধ জোয়ারের পানির চাপ সহ্য করতে পারছে না। এজন্য সরকার টেকসই বাঁধ নির্মাণের মেগা প্রকল্প নিয়েছে। সেই কাজ শুরুর আগে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাঁধ সংস্কারে অংশ নিচ্ছেন। সংস্কার কাজের অগ্রগতি দেখতে উপমন্ত্রী চলতি সপ্তাহে ওই এলাকায় যাবেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ট্রলারযোগে বাঁধের কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান। বাঁধের দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই হঠাৎ করে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা মানুষ কাদা-মাটি ছুড়তে থাকেন। জনরোষে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় এমপির ট্রলার। পরে অবশ্য ফিরে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২৬ মে ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দশহালিয়া গ্রামে বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের লোনাপানিতে। এখনও ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার পানি আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে।

গত তিনদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন এলাকার মানুষ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এমপি একটি ট্রলারে করে ওই ভাঙা বাঁধের স্থানে যান। যখনই তার ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তে যায়, তখনই কাদা ছুড়তে শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষ। বারবার মাইকে ঘোষণা করেও তাদের নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাদা ছুড়ে মারার একপর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আনোয়ার ইকবাল মন্টু, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জিএম মোহসিন রেজা, জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. কেরামত আলী, পাইকগাছা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বুলু, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম পাড়, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম বাহারুল ইসলাম, খুলনা জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবু, জেলা যুবলীগ নেতা শামীম সরকার, পাইকগাছা উপজেলা যুবলীগ নেতা এম এম আজিজুল হাকিম, কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেজবা উদ্দিন মাসুম, কয়রা উপজেলা যুবলীগ নেতা অ্যাড. আরাফাত হোসেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক আফি আজাদ বান্টি, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. আবু সাঈদ খান, ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম সজীব, জেলা ছাত্রলীগ নেতা পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী, মাসুদুর রহমান মানিক, কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম টিংকু, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাদল, পাইকগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিম মুস্তাফিজ বাচ্চু, পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান পারভেজ রনি, জেলা ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা প্রমুখ। 

মোহাম্মদ মিলন/ওএফ