ডেমি ধান কম হলেও সন্তুষ্ট কৃষক
সুনামগঞ্জে হাওরগুলোতে শুরু হয়েছে এখন ডেমি ধান কাটা। ডেমি ধান কাটতে প্রতিদিনই কৃষকরা হাওরে ব্যস্তি সময় পার করছেন। তবে অন্যান্য বছর থেকে এবার ডেমি ধান কম হলেও সন্তুষ্ট কৃষক। তারা বলছেন, আর কয়েক দিন এ ডেমি কাটতে পারলে কয়েক মাসের খোরাক হয়ে যাবে তাদের।
হাওর-বাঁওড়ের জেলা সুনামগঞ্জের কৃষকদের দুর্ভোগ নতুন নয়। এক ফসলি, বোরো ফসলি এলাকায় প্রায়ই বন্যা ও খরায় ফসলহানি হয়। তবে কয়েক বছর ধরে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ফসল তুলতে পেরেছেন কৃষক। এর ধারাবাহিকতায় এবারও সোনার বৈশাখ পেয়েছেন তারা। কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই বৈশাখ মাসেই ক্ষেতের ধান গোলায় তুলতে পেরেছেন। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কৃষক পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জে প্রতিটি হাওরে এবার বৈশাখের শুরুতে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়। যদিও জেলা প্রশাসন চৈত্র্য মাসের শেষের দিকে উৎসবের মধ্য দিয়ে ধান কাটা শুরু করে দেয়। শুরুতে শ্রমিক-সংকট থাকলেও উন্নতর হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার ও বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আনায় কোনো সমস্যা হয়নি কৃষকদের।
বিজ্ঞাপন
তাই বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় হাওরে ধান কাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ধান কেটে নেওয়া এসব ক্ষেত থেকে নতুন করে ধান জন্ম নিয়েছে এখন। ধান কাটা শেষ হওয়া ক্ষেতে নতুন করে জন্মানো ধানকে বলা হয় ডেমি। এই ডেমি ধান কাটতেই ব্যস্থ সময় পার করছেন কৃষক।
শাল্লা উপজেলার কৃষক মো. ছত্তার মিয়া বলেন, আমি ৯০ কেয়ার (শতাংশে ১ কেয়ার) জমিতে ধান চাষ করেছি। বৈশাখ মাসেই ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এখন জমিতে ডেমি হয়েছে। প্রতিবছরেই ক্ষেতে এ ডেমি ধান হয়। তবে কাটা যায় না। কারণ, অন্য বছর বৈশাখ মাসের শেষের দিকে হাওরে পানি চলে আসে। এবার এখনো আসেনি। এখন আমার জমিতে এখন ডেমি ধান কাটা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ডাকুয়ার হাওরের কৃষক মাহমুদুল হাসান বলেন, অন্য বছর আরও বেশি ডেমি ধান কাটা গেছে। এবার কম হয়েছে। যাই হয়েছিল, গরু নষ্ট করে দিচ্ছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার কাজিরগাঁও গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেন ও মো. জারু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ১০ দিন হাওরে ডেমি ধান কেটেছি। একেকজনের প্রায় ১০ মণ করে ধান হয়েছে। আর কয়েক দিন কাটতে পারলে কয়েক মাসের খাবারের জন্য আর চিন্তা করা লাগবে না বলে জানায় তারা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ফরিদুল হাসান বলেন, এ বছর হাওরে ডেমি ধান কম হয়েছে। বড় কৃষকরা এসব ডেমি ধান কাটেন না। হাওরের গরিব কৃষকরা কিছু ডেমি ধান কেটেছেন। তবে অনেক হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এবার আর ডেমি ধান কাটা যাবে না।
প্রসঙ্গত, এবার সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। হাওর থেকে কৃষকের এই ধান তুলতে ৮ হাজার ৫০০ বেপারি বাইরের জেলা থেকে আনা হয়েছে। এ ছাড়া ১ লাখ ৮৫ হাজার আঞ্চলিক বেপারি হাওরে কাজ করছেন। এ বছর ধান উৎপাদন হয়েছে ১৪ লাখ মেট্রিক টন।
সাইদুর রহমান আসাদ/এনএ