চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে আম

আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকায় আমসহ কৃষি পণ্য পরিবহনের জন্য গত বছর প্রথমবার চালু হয় ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। স্বল্প খরচে, কম সময়ে আম পরিবহনের সুযোগ দিলেও প্রচার প্রচারণার অভাবে প্রথম বছর ব্যর্থ হয় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের যাত্রা।

তবে গতব ছরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ৫-৭ গুণ বেশি আম যাচ্ছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিতীয় বছরে অধিক প্রচার প্রচারণা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চলমান কঠোর লকডাউনের প্রভাবে বেড়েছে ট্রেনে আম পরিবহন।

গত বছরের ব্যর্থতার পরেও এ বছর বিভিন্ন কৃষিপণ্য সহজে ও কম খরচে বহন করার জন্য সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ম্যাংগো স্পেশাল মালবাহী ট্রেন চালু করে।

কৃষিজাত পণ্য ও আম পরিবহনের জন্য চালু করার প্রথম সপ্তাহের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ৭২ হাজার ১৮২ কেজি আম বুকিং হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান দুটি রেলস্টেশন থেকে এসব আম রাজধানী ঢাকায় গেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫-৭ গুণ বেশি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. ওবাইদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে জানান, উদ্বোধনের দিন ২৭ মে ৮৬০ কেজি আম নিয়ে যাত্রা শুরু করে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। এরপর ২৮ মে ১৮৪৫ কেজি, ২৯ মে ৯ হাজার ৯১৭ কেজি, ৩০ মে ১০ হাজার ৪৬৫ কেজি, ৩১ মে ১৮ হাজার ৪৭১, ১ জুন ১২ হাজার ১৮৫ কেজি মিলে মোট ৫৩ হাজার ৭৪৩ কেজি আম ঢাকার বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হয়। এছাড়া আম মৌসুমে ব্যক্তিপর্যায়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আম পাঠানোর পরিমাণ বেড়ে গেছে ট্রেনে।

রহনপুর রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. মামুন জানান, উদ্বোধনের প্রথম দিন ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে এখান থেকে কোনো আম পরিবহন হয়নি। পর দিন ২৮ মে ৪৩০ কেজি, ২৯ মে ২৪২০ কেজি, ৩০ মে ৩৯৮৫ কেজি, ৩১ মে ৪৭৪৩ কেজি, ১ জুন ১ হাজার ৪৭০ কেজি ও ২ জুন ৫ হাজার ৩৭১ কেজি মিলে রহনপুর রেলস্টেশন থেক ঢাকায় মোট ১৮ হাজার ৪১৯ কেজি গেছে।

তিনি আরও জানান, এ বছর শুরু থেকেই ভালো সাড়া মিলছে। গত বছর অনেকদিন একেবারেই ফাঁকা ফাঁকা গেছে। কিন্তু চলতি বছরে উদ্বোধনের প্রথম সপ্তাহ হতেই বেড়েছে আম পরিবহন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন ছাড়াও নাচোল, নেজামপুর ও আমনুরা বাইপাস রেলস্টেশনে আম লোড করতে বিরতি দেয় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। তবে উদ্বোধনের পর এই ৩ স্টেশনে আম পরিবহনের পরিমাণ অনেক কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিনটি স্টেশন থেকে আম পরিবহনের পরিমাণ কয়েকশ কেজি হতে পারে।

এদিকে, উদ্বোধনের এক সপ্তাহ হতেই বুধবার (২ জুন) বিকেলে দৈনিক আম বুকিংয়ের জন্য নির্ধারিত সময় কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন অবরোধ করেন আম ব্যবসায়ীরা। অবরোধের কারণে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে গত বুধবার ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টায় ছেড়ে যেতে পারেনি।

অবরোধকারী ও আম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালুর পর থেকেই বিকেল ৩টা পর্যন্ত আম বুকিং নেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই মঙ্গলবার (১ জুন) থেক দুপুর ১টার পর আর আম বুকিং নেওয়া হবে না বলে জানানো হয় স্টেশনের বুকিং অফিস থেকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আমরা রেললাইনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখি। 

কলেজ শিক্ষার্থী কাউসার এ বছর অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আম সরবরাহ করছেন। তিনি জানান, কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনের আশেপাশের ক্রেতাদের আম ট্রেনে পাঠাই। কারণ এতে ক্রেতা খুব খুশি হন এবং কুরিয়ার সার্ভিসের অনেক আগেই আম হাতে পেয়ে যান।

উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে আমসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতে সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে স্পেশাল ম্যাংগো মালবাহী ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ মে থেকে চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম/এমএসআর