মাইন বিস্ফোরণে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক ও তাদের শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত শহীদ মিনার

৬ জানুয়ারি, ১৯৭২। এই দিনে দিনাজপুরে এক আকস্মিক মাইন বিস্ফোরণে ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। স্বাধীন বাংলাদেশে এতো বড় ট্রাজেডির ঘটনা আর কোথাও ঘটেনি। তখন থেকে দিনাজপুরবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে দিবসটি পালন করে আসছেন। 

সেই দিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ‌‌‘৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদের’ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিকুল হক ছুটু বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুর মুক্ত করে বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানিদের পুতে রাখা মাইন, ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র, বোমা এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করে মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় ট্রানজিট ক্যাম্পে এনে জড়ো করে। এ সময় ভারতের পতিরাম, হামজাপুর, বাঙ্গালবাড়ী, তরঙ্গপুর, বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ী, হাকিমপুর, কোতোয়ালি, ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ, রাণীশংকেল ও হরিপুর এলাকার ৬ ও ৭ নম্বর সেক্টরের প্রায় ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা এই ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান নেন। 

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি ঘোড়াঘাট থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা পরিত্যক্ত অস্ত্র, গোলাবারুদ বোঝাই দুটি ট্র্রাক দিনাজপুর মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছে বিকেল ৪টায়। মুক্তিযোদ্ধারা শুরু করেন ট্রাক থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাসের কাজ। ওই দিন সোয়া ৫টায় প্রথম ট্রাকের অস্ত্র নামানোর কাজ শেষ হয়। তারপর শুরু হয় দ্বিতীয় ট্রাকের অস্ত্র নামানোর কাজ। ট্রাক থেকে বাঙ্কারে অস্ত্র নামানোর সময় এক মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে অসাবধানতাবশত কয়েকটি পারসোনাল মাইন মাটিতে পড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে বাঙ্কারে মজুদ বারুদগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে বিদ্যালয়ের কক্ষে  অবস্থান করা এবং মসজিদে নামাজ আদায়কারী ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। 

তিনি আরও বলেন, পরের দিন গোর-এ শহীদ বড়ময়দানে বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে ৯৬ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পূর্ণসামরিক মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ পূণ্যভূমি দিনাজপুর চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। পরে ঐ স্থানে আরো ৩৯ জনসহ মোট ১৩৫ জনকে সমাহিত করা হয়। এছাড়া অনেকের মরদেহ তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা নিয়ে যায় এবং অনেকের দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ায় সঠিক মৃতের সংখ্যা বলা দুরূহ হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পরের দিন মহারাজা বিদ্যালয় এলাকা থেকে শরীরের হাত-পাসহ প্রায় ৫০ মণের মতো মাংসপিণ্ড উদ্ধার করা হয়। 

‌‘৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদের’ সাধারণ সম্পাদক সুলতান কামাল উদ্দিন বাচ্চু দাবি করেন, নিজ উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হলেও প্রসাশনের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি নেই। দিবসটি যেন প্রশাসনিকভাবে পালন করা হয় এমনটিই দাবি করেন তিনি। 

এদিকে, দিবসটি স্মরণে ‘৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদ’ প্রতি বছরের মতো এবারও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৯টায় চেহেলগাজী মাজারে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণসমাধি ও মহারাজা স্কুলের শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, কালো ব্যাচ ধারণ ও সকাল ১০টায় আলোচনা সভা এবং বাদ আসর মহারাজা স্কুল জামে মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। 

এসপি