এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চাল, তেল, পেঁয়াজ, ডিম ও আলুসহ অন্য দ্রব্যাদির দাম

নিত্যপণ্যের দাম ওঠানামা করায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কঠোর হাতে মনিটরিংয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় বাজারে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে দাম বাড়তে শুরু করলে তা আর সহজেই কমে আসে না। অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি, গেল রমজানে যেভাবে দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল, তা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

রংপুরের বাজারগুলোতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চাল, তেল, পেঁয়াজ, ডিম ও আলুসহ অন্য দ্রব্যাদির দাম। তবে দাম কমেছে মুরগির। অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ ও শাকসবজির দাম। রংপুর সিটি বাজার, কামাল কাছনা বাজার, ধাপ সিটি বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শনিবার (৬ জুন) দুপুরে রংপুর সিটি বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিনিকেট, নাজিরশাইল, বিআর-২৮ ও ২৯ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৪-৬ টাকা। মিনিকেট ৬২-৬৪ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৯-৬০ টাকা। নাজিরশাইল ৬০-৬২ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫৭-৫৮ টাকা। বি-আর আটাশ ৪৮-৫০ চাল গত সপ্তাহে ছিল ৪৫-৪৭ টাকা। বি-আর ২৯, ৪৫-৪৬ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৩-৪৪ টাকা। কাটারিভোগ কেজিতে বেড়েছে ৪-৬ টাকা। গত সপ্তাহে ৫৬-৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৬০-৬৫ টাকা কেজি এবং চিনিগুঁড়া ৮০-৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে পাইজাম, গুটিস্বর্ণা চালের আমদানি নেই জানিয়ে সিটি বাজারের চাল ব্যবসায়ী মিজু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, চালের দাম বেশ কয়েক মাস থেকেই ওঠানামা করছে। এভাবে ওঠানামা করতে থাকলে ক্রেতা ও ভোক্তা উভয়ের হয়রানি হতে হয়। অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বাজারে।

এ বাজারে চাল কিনতে আয়শা খানম বলেন, কয়োদিন আগে চালের দাম কিছুটা কমে গিয়েও আবার দাম বেড়ে গেছে। আমরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ তিন বেলা ভাত ছাড়া চলে না কিন্তু চালের দাম যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে নানা চাল কিনতেই টাকা শেষ। অন্য খরচ হয় না। কিছুটা কম দামে কেনায় চিন্তায় শুধু বাজার ঘুরে হয়রানি হতে হচ্ছে।

এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের প্রতি হালিতে ৪ টাকা দাম বেড়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ৩২ টাকা। দেশি মুরগির ডিম ৭০ টাকা, হাঁসের ডিম ৪০-৪৫ টাকা, পাকিস্তানি ৪৫ টাকা।

সিটি বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামছুল হক বলেন, দাম বেড়েও ডিমের চাহিদা কমেনি। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ডিম অত্যাবশ্যক। এ কারণে সব শ্রেণিপেশার মানুষের ডিম কেনায় চাহিদা রয়েছে।

ডিমের দাম বেশি হলেও দাম কমেছে মুরগিতে। বর্তমান বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যার দর ছিল ১৪৫-১৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমে পাকিস্তানি মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ২১০ টাকা। এ ছাড়া গত সপ্তাহের দরেই রয়েছে লেয়ার মুরগি ২২০ টাকা। হাঁস প্রতি জোড়া ৮০০-৯০০ টাকা। তবে দেশি মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে এখন ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সিটি বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রয়লার, পাকিস্তানি মুরগির আমদানি কিছুটা বেড়েছে বলেই দাম কমেছে। দাম কমাতে ক্রেতার সমাগম বেড়েছে। এখন কেনাবেচা ভালো হচ্ছে।

অন্যদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে গরুর মাংস ৫৫০ টাকা কেজি এবং খাসির মাংস ৮০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান লালবাগ হাটের মাংস ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম।

খোলা আটা ৩০ টাকা ও প্যাকেট আটা ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ময়দা ৪০-৪৫ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ৭৫-৮০ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১০০-১২০ টাকা, চিনি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য গত সপ্তাহের দরেই রয়েছে। এ ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েই চলেছে ভোজ্যতেলের দাম। খোলা সয়াবিন তেল ৫ টাকা বেড়ে প্রতিলিটার ১৪০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা, গত সপ্তাহের দরেই রয়েছে বলে জানান স্টেশন বাজার ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান।

সবজির বাজারে এখনো কিছুটা অস্বস্তিবোধ করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের মাঝে। পেঁয়াজের দাম ১৬-২০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৫০-৫৬ টাকা, কার্টিনাল আলু ১৪ টাকা, শিল‌ আলু ২৫ টাকা, সাদা আলু ২৪ টাকা। আদা ৬০-৮০ টাকা, রসুন ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০-২০ টাকা, শুকনা মরিচ ২৩০-২৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ২০-২৫ টাকা, ঝিঙা ২০-২৪ টাকা, বেগুন ২০-২৪ টাকা, পেঁপে ৪৫-৬০ টাকা, পটল ২০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ২০-২৫ টাকা, করলা ৩০ টাকা। টমেটো ৬০ টাকা, গাজর ৮০-১২০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, কচুর লতা ২৫ টাকা, পানিকুমড়া ২০ টাকা, শজনে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ধনেপাতা ১০, পুঁইশাক ১০-১২ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান সিটি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। বর্তমানে চিংড়ি ৬৫০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ১৯০-২২০ টাকা, কাতল ৩০০ টাকা, পাবদা ২০০-২৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৫০০-৫৬০ টাকা, ইলিশ মাছ (আকারভেদে) ৭০০-১০০০ টাকা, শিং ২০০ টাকা, তিনকাঁটা ২০০-২৩০ টাকা, গচি ৪০০ টাকা, কার্পু ১৮০ টাকা, স্বরপুঁটি ১৬০ টাকা, পাঙাস ১২০ টাকা, সিলভার কার্প ১২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ