জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে আরও ৯ জনের

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ, মৃত্যু ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন। শনিবার (৫ জুন) দ্বিতীয় দফা লকডাউনের পঞ্চম ও কঠোর লকডাউনের ১২তম দিন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৬০ শতাংশ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটিপিসিআর ল্যাবে ১৭৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১০৫ জনের দেহে প্রাণঘাতী ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। এ সময় জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে আরও ৯ জনের।

১ জুন থেকে দ্বিতীয় দফায় কঠোর লকডাউন চলাকালেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু ৫৪ জন। গত মাসের ২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত চলা প্রথম দফা লকডাউনে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। দ্বিতীয় দফার লকডাউনে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ৪৩ শতাংশ।

শুক্রবার (৪ জুন) সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ এবং শনিবার সংক্রমণের হার প্রায় ৫৫ শতাংশ। কঠোর লকডাউন চলাকালে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় আতঙ্কিত সচেতন মহল।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোগী শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বাড়ানো হয়েছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বেডের সংখ্যা।

করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের তথ্য প্রদান কর্মকর্তা ডা. আহনাফ শাহরিয়ার ঢাকা পোস্টকে জানান, জেলার ৩০ শয্যার করোনার ইউনিটে বর্তমানে ৩০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আগামী রোববার (৬ জুন) এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রথম দফা লকডাউনে জেলায় সংক্রমণের হার নিম্নমুখীই ছিল। তবে দফায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও সুফল মিলছে না। সারাদেশে সংক্রমণের হার যেখানে ১১ শতাংশ, সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তা ৪০-৬০ শতাংশ। সংক্রমণ না কমে আসার কারণ হিসেবে জনসাধারণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাকেই দায়ী করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা শহরে কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন। তবে মফস্বলের মানুষ সঠিকভাবে মানছে না লকডাউন বা সরকারি নির্দেশনা। মফস্বলে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকরে মাঠে তৎপর রয়েছেন জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যরা। লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছে জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশও। জেলা প্রশাসনের ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলাজুড়ে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করা হচ্ছে জরিমানা।

কঠোর লকডাউনের ১২তম দিনে জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এবং জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেছে। লকডাউনে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস ও ট্রেনসহ যানবাহন বন্ধ রয়েছে। তবে কৃষিপণ্য ও আম পরিবহনে চালু রয়েছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দরে কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। আম বাজারজাতকরণ ও রফতানি কার্যক্রম লকডাউনের আওতামুক্ত রেখে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ও একমাত্র পাকা আমের বাজার ‘কানসাট আম বাজার’।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় ৫০টির অধিক তল্লাশিচৌকি ও ২৭টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। বাড়ির বাইরে রাস্তায় আসা ব্যক্তিরা যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে বরাবরের মতোই জরুরি সেবা কঠোর লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বর্তমানে করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১ হাজার ১৮১ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৩৪৭ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত জেলায় করোনায় মারা গেছেন মোট ৫৪ জন।

তিনি জানান, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নয়, বরং লোকাল ট্রান্সমিশনের কারণেই জেলায় বেড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। তাই জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ কমে আসার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে শনিবার পর্যন্ত ভারতে আটকে পড়া ৯২ বাংলাদেশি সোনামসজিদ স্থলবন্দর হয়ে দেশে ফিরেছেন। তাদের শিবগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলো, জেলা শহরের হোটেল আল নাহিদ, হোটেল রোজ ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন শেষে ২৪ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন দেয় জেলা প্রশাসন। প্রথম দফায় লকডাউন শেষ হওয়ার পর আবারও দ্বিতীয় দফায় ৭ জুন পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এনএ