বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে তরুণ চা দোকানদারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা বেশি দূর এগোতে পারেননি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার হারুন অর রশিদ (২৩)। সংসারের হাল ধরতে বছর ছয়েক আগে পৌর সদরের কালীখলা মহল্লায় একটি চায়ের দোকান দেন। দোকানের আয়েই চলে সংসার ও ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ।
ব্যতিক্রমী গ্রাহকসেবার মাধ্যমে এলাকার বাসিন্দাদের বাড়তি নজর হারুনের প্রতি। আর তিনি প্রতি বছর সেরা চা গ্রাহকদের দেন বিশেষ সম্মাননা। যার কারণে ‘হারুন টি হাউজ’ নামটি সবার কাছে বেশ পরিচিত।
বিজ্ঞাপন
এবার ভিন্ন এক উদ্যোগ নিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছেন এই তরুণ চা দোকানদার। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সম্মান জানাতে নিয়েছেন অন্য রকম এক উদ্যোগ। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তার দোকানে চা পান করতে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে চায়ের দাম অর্ধেক রাখবেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এভাবেই চা বিক্রি করবেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হারুন অর রশিদ বলেন, এটি দোকানের প্রচার স্বার্থে নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করতেই নিজের সামর্থ্যের মধ্যে এটুকু করার চেষ্টা করেছি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমার দোকানে চা পান করতে এলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) রাতে হারুন টি হাউজে এক চা চক্রের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রবীণ আইনজীবী আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ ও শহীদ পরিবারের সদস্য প্রবীণ সাংবাদিক সুপ্রিয় ধর বাচ্চু মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় অতিথিদের চা আপ্যায়নের মধ্যদিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চায়ের বিল অর্ধেক ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেন হারুন।
চা বিক্রেতা হারুনের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, হারুনের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তার দোকানে চায়ের আড্ডায় সামিল হয়েছিলাম। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান ও বিরল ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে সে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এখানে চায়ের দামের বিষয়টি বড় নয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি হারুনের শ্রদ্ধাবোধের বহিঃপ্রকাশ এটি। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে হারুনকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রবীণ সাংবাদিক সুপ্রিয় ধর বাচ্চু বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কতটা আবেগ ও ভালোবাসা থাকলে একজন চা দোকানদার এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে সেটা ভাবতেই আনন্দে চোখে পানি চলে আসে। স্বাধীনতার এত বছর পরও হারুনের মতো একজন তরুণের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ফুটে উঠেছে সেটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
জানা গেছে, হারুনের বাড়ি গৌরীপুর পৌর এলাকার সতীষা মহল্লায়। তিনি ওই মহল্লার আব্দুল জব্বারের ছেলে। তাদের ছয় ভাই-বোনের মধ্যে চার ভাই-বোন বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। বর্তমানে মা-বাবা ও অনার্স পড়ুয়া এক বোনকে নিয়ে হারুনের সংসার।
উবায়দুল হক/এসপি