পাহাড়ে যেন বৃষ্টি থামছেই না। কখনো ভারী, কখনো মাঝারি, আবার কখনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে বেড়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। ফলে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের। 

এদিকে টানা বর্ষণের ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোর দুপাশে মাটি সরে ও পাহাড়ের মাটি পড়ে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে পাহাড়- এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আবহাওয়া অফিস বলছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ু অব্যাহত থাকার কারণে এ বৃষ্টি চলমান থাকবে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে সরে যেতে হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টরাও কাজ করছে। 

জানা গেছে, বান্দরবানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরানো বেশির ভাগ সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে জানা গেছে, সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপা পাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া, লামা উপজেলার হরিনমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিম পাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারী, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়াসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার। এ বছরও পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে ওঠায় গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে গেছে।

জেলা তথ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে তিনজন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাঁচজন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুইজন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৫ সালে লামায় চারজন, সিদ্দিকনগরে একজন এবং সদরের বনরূপা পাড়ায় দুইজন এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় সাতজন ও রুমা সড়কে ২৩ জুলাই পাঁচজন পাহাড় ধসে মারা গেছেন।

পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিতে থাকা কালাঘাটার মো. আলী হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি অনেক কষ্ট করে এ জায়গাটি কিনে পাহাড়ের জঙ্গল সামান্য ছাঁটাই করে ঘর তৈরি করেছি। প্রতি বছর বর্ষাতে আমি পরিবারকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে রাত যাপন করি। পাহাড় প্রতি বছরই কম বেশি ধসে পড়ে। আমাদের এখানে বড় ধরনের সমস্যা না হলেও এবারের টানা বর্ষণে আমি পরিবার নিয়ে ভয়ে আছি।

বান্দরবান পৌরসভার ইসলামপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ লেয়াকত আলী জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে লাঙ্গিপাড়া-সিকদার পাড়া- ইসলামপুরের সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দু’পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে, পাহাড়ের মাটি এসে পড়েছে রাস্তার ওপর।

বান্দরবানের মৃত্তিকা কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, পাহাড়ের মাটিগুলো অম্ল প্রকৃতির অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মাটির ওপরের অংশ ক্ষয়ে যায়। পানি মাটির গভীরে প্রবেশ করে ড্রেনের সৃষ্টি করে। এতে মাটির ভীত সরে যায়। ফলে পাহাড় ধসে পড়ে। এ ছাড়া পাহাড় কাটা, জুমচাষ, পাথর উত্তোলন, নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন ইত্যাদি কারণে পাহাড়ের মাটি দুর্বল হয়ে যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এক সময় মাটি ধসে পড়ে।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। তাদের সরিয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টরাও কাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে প্রশাসন।

এসপি